আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সঞ্জয় রায়। তার সাজা ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। সূত্রের দাবি, এই সঞ্জয় রায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) মোট ১০৪টি প্রশ্নর করেছিল। যার অর্ধেকেরও বেশি প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি সঞ্জয়! কিন্তু, একটি বিশেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ছিল ইতিবাচক!
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ১০৪টি প্রশ্নের মধ্যে ৫৬টি প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জয় বলে, 'আমি বলতে পারব না'। কিন্তু, যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাকে দেখা গিয়েছে, সেই ব্যক্তি সে কিনা, তার জবাবে সঞ্জয় গোয়েন্দাদের জানায়, সেটা সেই-ই। গত বছরের ৯ অগস্ট, আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে তাকেই দেখা গিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সঞ্জয় রায়ের এই একটি বয়ানই আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ইতিমধ্যেই শিয়ালদহের নিম্ন আদালত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং তাকে যাবজ্জীবন (আমরণ) কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে। বিচারক অনির্বাণ দাস তাঁর ১৭২ পৃষ্ঠার বিচারনামায় সঞ্জয়ের উপরোক্ত স্বীকারোক্তিটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। যে স্বীকারোক্তি শুনানি চলাকালীনও সঞ্জয় করেছিল।
বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, সঞ্জয় অনেক প্রশ্নেরই নেতিবাচক বা 'না' সূচক জবাব দিয়েছেন। কিন্তু, একবারও সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজে তার উপস্থিতির দাবি অস্বীকার করেনি।
বিচারক এই প্রসঙ্গে বলেন, 'তাকে বলা হয়েছিল, সে ওই প্রশ্নের যে জবাব দেবে, তা তার বিরুদ্ধে যেতে পারে। তারপরও, পুরোটা জানা সত্ত্বেও সে স্বীকার করেছে, ওই ফুটেজে থাকা ব্যক্তি সে। তাই এক্ষেত্রে অভিযুক্তের এই বয়ান সম্পূর্ণ সংযোগপূর্ণ।'
আরজি কর হাসপাতালের থার্ড ফ্লোর বা চারতলায়, চেস্ট বিভাগে যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল, তার মধ্যে বিশেষ অ্য়াঙ্গেল ওঠা একটি ফুটেজ আদালত অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং খতিয়ে দেখেছে।
যদিও যে স্থানটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রাইম সিন বা ঘটনাস্থল বলে দাবি করা হয়েছে, সেই স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার কভারেজের আওতার মধ্যে নেই। বরং, সেই স্থান সিসিটিভি ক্য়ামেরার কাছাকাছি, এটা বলা যায়।
গত ৯ অগস্ট, ভোর ৪টে ৩১ মিনিটের একটি সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছে। তার হাতে সেই সময় একটি হেলমেট ছিল। এবং তার গলায় কোনও ব্লু টুথ ইয়ারফোন ছিল না। সঞ্জয় স্বীকার করেছে, ওই দিন ভোর ৪টে ০৩ মিনিট থেকে ৪টে ৩১ মিনিট পর্যন্ত সে চেস্ট ডিপার্টমেন্টে ছিল।
এই স্বীকারোক্তি থেকে বিচারক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ঘটনাস্থলে সঞ্জয়ের উপস্থিতি প্রমাণিত।
যদিও সঞ্জয় দাবি করেছিল, ওই হাসপাতালে তার এক সহকর্মী, যিনি সিভিক ভলান্টিয়ার, তাঁর অস্ত্রপচার করা হয়েছিল এবং তিনি ওই বিভাগে ভর্তি ছিলেন। এবং তাঁকে দেখতেই নাকি সে হাসপাতালে গিয়েছিল। অথচ, সেই রোগী সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি সে।
সঞ্জয় আরও দাবি করেছিল, সে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে নিজের হেলমেট আর ইয়ারফোন রেখে এসেছিল। কিন্তু, এই দাবিও প্রমাণ করতে পারেনি সঞ্জয়।
এদিকে, নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের শরীরে সঞ্জয়ের স্যালাইভার নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। এতে সঞ্জয়ের দাবি ছিল, ওই প্রমাণ আরোপিত। পুলিশ হেফাজতে তার উপর অত্যাচার করে ওই স্যালাইভা সংগ্রহ করা হয়। এবং পরে তা নির্যাতিতার শরীরে আরোপ করা হয়।
এছাড়াও, সঞ্জয় মুখে আঘাত ছিল। তার দাবি ছিল, বক্সিং অনুশীলন করতে গিয়ে তার ওই আঘাত লেগেছে। যা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা খারিজ করে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, আঘাত বলতে এখানে আঁচড়ের দাগ বলা হয়েছে। কোনও ভোঁতা জিনিসের আঘাত নয়।
শুনানির এই অংশগুলি খতিয়ে দেখে বিচারকের মন্তব্য, সঞ্জয় যা বলেছে, তার কোনও সারবত্তা নেই। আসলে কী বললে, সেটা যুক্তিযুক্ত হবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারেনি সঞ্জয়। ফলে তার যখন যা মনে হয়েছে, সেটা বলে গিয়েছে। বলা বাহুল্য, সঞ্জয়ের এহেন আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা তার বিরুদ্ধে গিয়েছে।