গতকাল আরজি করে এক ট্রেইনি চিকিৎসকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল হাসপাতাল চত্বরে। প্রাথমিক ভাবে দাবি করা হয়েছিল যে সেই তরুণী আত্মহত্যা করেন। পরে অবশ্য ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হয় যে, আত্মহত্যা নয়, বরং ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে সেই চিকিৎসককে। এই আবহে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল বিরোধী বাম-বিজেপির। আরজি করের চিকিৎসক, ছাত্ররা মোমবাতি মিছিল করেন। এই সবের মঝেই পুলিশের বিরুদ্ধে ওটে দেহ 'লুঠ' করার অভিযোগ। দাবি করা হয়, মৃত চিকিৎসকের মা-বাবা হাসপাতালে পৌঁছলে প্রথমে তাঁদের মৃতদেহ দেখতে বাধা দিয়েছিল পুলিশ। দেহ ময়নাতদন্তদের পরে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই মৃতদেহ। সেই সময় মৃত চিকিৎসকের মা-বাবা পুরোপুরি অন্ধকারে। কোথায় গেল তাঁদের মেয়ের দেহ? পরে জানা যায়, সেই চিকিৎসকের পানিহাটির বাড়িতেই দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। তবে ততক্ষণে মৃত তরুণীর মা-বাবাই বাড়িতে এসে পৌঁছতে পারেননি। এই আবহে বন্ধ বাড়ির দরজর সামনেই দীর্ঘক্ষণ থাকে মৃত চিকিৎসকের নিথর দেহ। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ১ ঘণ্টা বন্ধ বাড়ির দরজার সামনে পড়েছিল চিকিৎসকের মৃতদেহ।
সকালে তরুণী চিকিৎসকের খবর প্রকাশ হতেই মা-বাবা ছুটেছিলেন হাসপাতালে। ততক্ষণে পাড়া-প্রতিবেশীরাও ঘটনার বিষয়ে জানে পেরেছিলেন। জটলা হয়েছিল সেই চিকিৎসকের বাড়ির সামনে। সন্ধ্যায় সেই জটলার মাঝেই শববাহী দেহটি এসে পৌঁছয় বাড়ির সামনে। তবে সেই সময় চিকিৎসকের মা-বাবাকে সেখানে দেখতে না পেয়ে অবাক হন প্রতিবেশীরা। এদিকে সেই সময় সেই তরুণীর মা-বাবা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে থানার দিকে যাচ্ছেন। তখন তাঁরা জানেন না যে মেয়ের দেহ কোথায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের সামনে মৃত চিকিৎসকের বাবাকে ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখ যায়। অবশ্য, তরুণীর বাড়ির সামনে এলাকার স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। তিনি দাবি করেন, সেই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, তদন্তের স্বার্থে সিট গঠন করা হয়েছে। দোষীদের খুঁজে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল। বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তদন্ত করতে ভয় কেন পাচ্ছে? এদিকে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এদিকে চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রশ্ন, যেই হাসপাতালে মৃতদেহ উদ্ধার হল, সেখানেই কীভাবে সেই তরুণীর দেহের ময়নাদন্ত হল? এই সবের মাঝে মৃত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চারতলায় ওই চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে যে তাঁকে ধর্ষণ করে খুব করা হয়েছে। দেহ যখন উদ্ধার করা হয়েছিল, তখন পোশাক অবিন্যস্ত ছিল। যে সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।