আরজি কর হাসপাতালে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গত শনিবার অভিজিৎকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সেদিনই এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় সন্দীপ ঘোষকেও। উল্লেখ্য, সন্দীপ ঘোষ আগে থেকেই আরজি কর দুর্নীতি মামলায় জেলে ছিলেন। তবে খুনের মামলায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে তাঁকে ফের হেফাজতে নেয় সিবিআই। প্রাথমিক ভাবে তিনদিনের হেফাজতে নিয়ে অভিজিৎ এবং সন্দীপকে জেরা করে সিবিআই। গতকাল সেই মেয়াদ শেষ হলে আদালতে পেশ করা হয়েছিল তাঁদের। সেখানে ফের তাঁদের তিনদিনের জন্যে হেফাজতে চায় সিবিআই। শিয়ালদা আদালতের বিচারক সিবিআইয়ের সেই দাবি মেনে নেয়। ২০ সেপ্টেম্বর তাঁদের দু’জনকে আবার হাজির করানো হবে আদালতে। বলা হয়, 'এই দু'জনের একে অপরের ছাড়াও আরও অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে ফোনে। এরা তদন্তে সহযোগিতা করেছেন না। তাই আরও ৩ দিন হেফাজতে চাইছি।' (আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে তদন্ত নিয়ে CJI-এর বড় নির্দেশ, তারপরই নির্যাতিতার বাড়িতে CBI)
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে 'অন্য কারও নির্দেশ'? সন্দীপ ঘোষেরও 'মাথা' খুঁজছে সিবিআই?
গতকাল শিয়ালদা আদালতে সিবিআই অভিযোগ করে, জেরায় দু’জনেই সদুত্তর দিচ্ছেন না। সে কারণে, তাঁদের আরও তিন দিন হেফাজতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে সন্দীপ এবং অভিজিতের মধ্যে মোবাইলে সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা হয়েছিল। এছাড়াও তাঁদের কল-লিস্টে বেশ কয়েকটি 'সন্দেহভাজন' নম্বর রয়েছে বলে দাবি করল সিবিআই। এই আবহে আরও জেরা এবং অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে দাবি করেছে সিবিআই। এছাড়া গতকালই টালা থানার অতিরিক্ত ওসি-কে তলব করা হয়েছিল সিজিও কমপ্লেক্সে। সিবিআই জানাচ্ছে, টালা থানা থেকে সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে গতকাল আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, সম্ভবত সন্দীপ ঘোষের নির্দেশেই টালা থানার ওসি দেরিতে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল তাদের মধ্যে।
এদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবীর কথা শুনে আদালত বলে, 'ঘটনার আগেই ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে সেটা অত্যন্ত উদ্বেগের।' এই আবহে অভিজিৎ এবং সন্দীপের বিরুদ্ধে কেন পৃথক এফআইআর করা হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন বিচারক। শিয়ালদা আদালতের বিচারক শুভাশিস দে সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, 'আপনারা ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। খুন ও ধর্ষণে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, নাকি প্রমাণ লোপাটে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে? আপনাদের কাছে কোনও তথ্য আছে, যার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে খুন ও ধর্ষণে তাঁরা যুক্ত?' জবাবে সিবিআই বলে, 'আমরা সবদিকই খতিয়ে দেখছি। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সন্দীপ ইচ্ছাকৃতভাবে এফআইআর করতে দেননি। কিন্তু তাই বলে ওসি এফআইআর করবেন না কেন? কে আটকেছে? এটা ষড়যন্ত্র।' এদিকে গতকাল আদালতে অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবী পালটা সওয়াল করেন, 'অভিজিৎবাবু তদন্তে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তিনি সহযোগিতা করেছেন মাত্র। তাছাড়া সিবিআই যতবার ডেকেছে তিনি হাজিরা দিয়েছেন। এখন তাঁকে জেরা করার নামে অযথা আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।' যদিও সেই যুক্তি আদালত গ্রহণ করেনি।