আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার এখন তদন্ত করছে সিবিআই। এই অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। এরপর নাগরিক সমাজের পথে নামা এবং আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুর করার ঘটনা সকলেই দেখেছেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় এতটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, লেডিজ হস্টেল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর ছাত্রী হস্টেল যত ফাঁকা হচ্ছে তত আতঙ্ক আরও বেশি করে গ্রাস করছে। অধিকাংশ মহিলা পড়ুয়াই ভয়ে হস্টেল ছেড়েছেন বলে খবর।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সঞ্জয় রায়কে আজ, শুক্রবার বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠাল আদালত। কিন্তু তদন্ত কতদূর এগোলো? এই প্রশ্ন তুলছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাই আজ তাঁরা সিবিআই দফতরে যান বিষয়টি জানতে। এই আবহে নার্সিং হস্টেল ছাড়া আরজি কর কলেজের বেশিরভাগ হস্টেলই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। এখন হস্টেল ছাড়ার হিড়িক লেগেছে। সকলেই অজানা আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছে। এই বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, ‘এখন আমরা মাত্র ১৭ জন রয়েছি। এই হস্টেলে ১৬০ জন জুনিয়র মহিলা ডাক্তার ছিলাম। নানা কোর্সে পড়া আমরা মেয়েরা একসঙ্গে এই হস্টেলেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমীতে কলকাতা মেট্রো সংখ্যায় কম চলবে, প্রথম–শেষ ট্রেনের সূচি জেনে নিন
৯ অগস্টের পর থেকে ছাত্রীরা হস্টেল ছাড়তে শুরু করেন। অনেকের অভিভাবক এসে নিয়ে যান ছাত্রীদের। তবে বেশি হারে হস্টেল ছাড়া শুরু হয় হাসপাতালে ঢুকে গুন্ডাদের হামলার ঘটনার পর। কারণ এই আবাসিক মেয়েরা নিজের চোখের সামনে দেখেছেন সেদিনের তাণ্ডবলীলা। ১৪ অগস্ট রাতের অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না বলেই হস্টেল ছাড়তে শুরু করেছেন একে একে। আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে পাঁচটি হস্টেল। তার মধ্যে ডাক্তার ও পড়ুয়াদের আলাদা হস্টেল আছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী অপরাজিতা সিং বলেছেন, ৭০০ আবাসিক ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৩০–৪০ জন মহিলা ডাক্তার এবং ৬০–৭০ জন পুরুষ ডাক্তার হাসপাতালে আছেন। বাকিরা ফিরে গিয়েছেন। ছাত্রীদের হস্টেল একেবারে খালি।
শহর এবং গ্রামবাংলা থেকে এখানে অনেকেই এসে ছিলেন। কিন্তু একদিকে ধর্ষণ–খুন অপরদিকে হাসপাতালে হামলা আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করেছে। এই আবহে ছাত্রীদের অভিভাবকরাও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। তাই তাঁরা নিজের মেয়েদের বলছেন ফিরে আসতে। সব স্বাভাবিক হলে তারপর আবার যোগ দেওয়া যাবে। এখন আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তারপরও যেন আতঙ্ক কাটছে না। এক পড়ুয়া ছাত্রীর বক্তব্য, ‘আমরা এখনও স্বস্তি পাচ্ছি না। আমি এই হাসপাতালে ধর্ষক ও খুনিদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারব না।’ নার্সদের কথায়, ‘মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।’