আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার জেরে কলকাতার রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠেছে। এখন নানা মিছিল, ধরনা জারি আছে। সঙ্গে উঠেছে স্লোগান–উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আর এই আবহে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকতে বলেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেটা হয়নি। বরং সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক ডেকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কাজকর্ম সম্পর্কে জানান। আর বার্তা দেন। এবার পাল্টা আবার বার্তা দিলেন রাজ্যপাল। সোমবার রাতে রাজভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সংবিধানের ১৬৭ (সি) অনুচ্ছেদ মেনে চলতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এদিকে এই বার্তা রাজ্যপাল দিয়ে কার্যত সংঘাতের পথে হাঁটলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই সংঘাত বরাবরই ছিল। এবার তার মাত্রা বাড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্যের পর সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগে রাজ্যপাল রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিলেন। আবার এই সংবিধানের অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে রাজ্যের তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। যাতে রাজ্যপাল সব অবগত থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী এখানে সংযোগকারী হিসাবে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: আরজি কর হাসপাতালের ৫১ জন ডাক্তার সাসপেন্ড, জারি করা হয়েছে তদন্তের নোটিশ
অন্যদিকে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দায়িত্ব হল রাজ্যের প্রশাসন ওবং আইনি প্রস্তাব সংক্রান্ত যাবতীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে জানানো। আর রাজ্যপাল যদি চান সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয় জানাতে হবে। কোনও মন্ত্রী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে যা মন্ত্রিসভা বিবেচিত করেনি সেটাও রাজ্যপালকে জানাতে হবে সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী। কদিন আগে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সরাসরি কলকাতা পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেটাও মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে। কিন্তু প্রশাসনিক বৈঠক ডেকে সেটা যে তিনি করছেন না তা জানিয়ে দিয়েছেন।
আর তারপরই রাতে চলে এসেছে রাজ্যপালের বার্তা। মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৬৭ (সি) অনুচ্ছেদের কথা। যা সংবিধানে আছে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর উপর একটা চাপ তৈরি করলেন রাজ্যপাল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আর তিন মাস মেয়াদ আছে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের। তারপর এমনিই সরে যেতে হবে বিনীত গোয়েলকে। তাই এখন দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে এই পরিবর্তন করতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। কারণ আইনশৃঙ্খলা দুর্গাপুজোর সময় কলকাতা পুলিশকেই দেখতে হয়। আর সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে। এখন দেখার জল কতদূর গড়ায়।