তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে ৮টা। শনিবার জুনিয়র ডাক্তাররা ঘোষণা করলেন, ‘আজ থেকেই আমরা আমরণ অনশনে বসছি। আমরা কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।’ অনশনে বসেছেন ছ’জন। তখন জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘আজকে যাঁরা অনশনে বসলেন, তাঁদের মধ্যে আরজি কর হাসপাতালের কেউ নেই।’ কিন্তু কেন নেই? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে আজ, রবিবার জানা গিয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে থাকবেন সিনিয়ররা। তবে অনশন করবেন কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, আরজি কর হাসপাতালের এই মুহূর্তের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবেই।
ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ গড়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ‘আমরণ অনশনে’ বসেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, স্নিগ্ধা হাজরা, তনয়া পাঁজা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য। তবে এই তালিকায় আরজি কর হাসপাতালের কেউ নেই। তাহলে কি আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে গেল আন্দোলন? উঠছে প্রশ্ন। যদিও অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের আন্দোলনের অন্যতম বিষয় থ্রেট কালচার। আর তার বিরুদ্ধে লড়াই। আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি।’
আরও পড়ুন: অসম তৃণমূলের দায়িত্বে এবার আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, ঘোষণা করল ঘাসফুল শিবির
এদিকে আন্দোলনের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই হচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের সাধারণ সভার (জিবি) মধ্যে দিয়ে। তাই মতামতও আসছে অনেক। যার জেরে এক একটি প্যান জিবি চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। কর্মবিরতি থেকে শুরু করে আমরণ অনশন প্রতিটি ক্ষেত্রে পক্ষে–বিপক্ষে মতামত ছিল। এবার যা দেখা যাচ্ছে এটা সেটারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। সূ্ত্রের খবর, আন্দোলন কোন পথে এগোবে সেটা নিয়ে প্রথম থেকেই নানা মত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার কাজে ফেরার অনুরোধ করলেও এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ‘বিরোধ’ স্পষ্ট হয়েছিল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর ৪২ দিনের মাথায় কর্মবিরতি আংশিক উঠে যায়। তখনও সেটার সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তাররা অনেকেই একমত হতে পারেননি। সুতরাং বিভাজন স্পষ্ট।
অন্যদিকে সাগর দত্ত হাসপাতালের ঘটনায় আবার নতুন করে কর্মবিরতি শুরু হয়। তাতে জুনিয়র ডাক্তাররা সামিল হলেও সিনিয়ররা সরে দাঁড়ান। যার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, সিনিয়র ডাক্তারদের দুর্গাপুজোর সময় দেশ–বিদেশের টিকিট কাটা আছে। তাই তাঁরা সামিল হচ্ছেন না। এখন আবার দেখা যাচ্ছে, অনশনে আরজি কর হাসপাতালের কেউ নেই। তবে অনিকেতের কথায়, ‘যা হচ্ছে সেটাতে আমাদের সকলের সমর্থন আছে। আমরা হয়তো এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। তবে পরবর্তী সময়ে আবার বৈঠকে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন হয়তো আমাদের অন্য কোনও ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই।’