সময় কেটে গিয়েছে। এখন আর সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ নেই। সেই ভিড় হয় না শহরের রাজপথে। কিন্তু তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা আজও তাজা হয়ে আছে। আরজি কর হাসপাতালে ঠিক ৬ মাস আগে এই ৯ তারিখেই ঘটে গিয়েছিল আলোড়ন ফেলা ঘটনা। ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে। আজ নিহত তরুণী চিকিৎসকের জন্মদিন। তাই তো আজই মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন তাঁর মা–বাবা। দুপুরবেলায় কলেজ স্ট্রিট থেকে আরজি কর হাসপাতাল পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে ‘অভয়া মঞ্চ’। বিকেল ৫টার সময় আরজি কর হাসপাতালে মূল অনুষ্ঠান। তবে এখানেই শেষ নয়, আজ রবিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার প্রয়াগরাজে গিয়ে তর্পণ করলেন।
কদিন আগেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে গিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা মা। তারপর আজ জন্মদিন পালন করতে রাস্তায় নেমেছেন। আজ যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে ওই তরুণী চিকিৎসক ৩২ বছরে পা দিতেন। এক বছরের জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করা হলেও বাকি সবসময় ঘরোয়াভাবেই পালন করা হতো মেয়ের জন্মদিন। ওই নিহত চিকিৎসক মেয়ে মায়ের হাতের তৈরি গুড়ের পায়েস খেতে ভালবাসতেন। ওই পায়েস আর কখনই বানাবেন না বলে রবিবার জানিয়েছেন তাঁর মা। মেয়ের জন্মদিনে সন্তানহারা মা–বাবা বলেন, ‘আগের লড়াইটা ছিল মেয়ের স্বপ্ন পূরণের। ওকে ডাক্তার বানানোর। এখন লড়াই করছি, মেয়ের ধর্ষণ–খুনের বিচারের জন্য।’
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে সবজি ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে চলল গুলি, শুটআউটের ঘটনায় জড়িত তিন দুষ্কৃতী
এদিকে আজ সুকান্ত মজুমদার পৌঁছে গেলেন প্রয়াগরাজে। সেখানে গিয়ে নিহত তরুণী চিকিৎসকের উদ্দেশে প্রার্থনা করেন। আর তর্পণও করেন। সপরিবারে স্নান সারেন মন্ত্রী সুকান্ত। তারপর সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘অভয়া বোনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ প্রয়াগরাজে সপরিবার পুণ্যস্নানের পর তাঁর স্মৃতি তর্পণ করলাম। একইসঙ্গে অভয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমার দুই কন্যার সঙ্গে একটি বৃক্ষরোপণ করলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, অভয়া বোনের বিদেহী আত্মা যাতে চিরশান্তি লাভ করে। অভয়ার জন্মদিনে তাঁর শোকসন্তপ্ত বাবা–মাকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, ন্যায় বিচারের জন্য আমাদের লড়াই চলতে থাকবে।’
অন্যদিকে সিবিআইয়ের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শিয়ালদা আদালত আরজি কর ঘটনার মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। অনেকেই এই অপরাধীর ফাঁসি চেয়েছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত ফাঁসির দাবি করেছেন। আর রাজ্য সরকার ফাঁসির দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করে। কিন্তু তাতে ফাঁসি হয়নি সঞ্জয়ের। যদিও এই রায়ে খুশি নন নির্যাতিতার মা–বাবাও। তাঁদের দাবি, এই ঘটনায় সঞ্জয় একা যুক্ত নয়। তার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত রয়েছে। তারা বাইরে ঘুরে বেরাচ্ছে। এই প্রথম জন্মদিনে সন্তান নেই। চোখের জল ফেলে তাঁর মায়ের কথায়, ‘ও গাছ ভালবাসত। প্রত্যেক বছরই মেয়ের জন্মদিনে গাছ লাগাই। এবারও এনেছি। ও বলেছিল সব রঙের বোগেনভেলিয়া আছে। কমলা রঙের নেই। ওটাই এনেছি। কিন্তু ওর আর দেখা হল না।’