আরজি করে চিকিৎসক খুনের ঘটনার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়েছিল। এই আবহে এই দুর্নীতির মামলার তদন্তেও নেমেছিল সিবিআই। আর আরজি করের দুর্নীতির তদন্ত করতে করতে অন্য সব মেডিক্যাল কলেজেও দুর্নীতির সুতো ঝুলতে দেখে সিবিআই। এই আবহে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি রিপোর্টে এক সিবিআই অফিসারকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, বাংলায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা হতে পারে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত সংক্রান্ত শেষ যে স্টেটাস রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা করা হয়েছে, সেখানে বাংলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৃহত্তর দুর্নীতির উল্লেখ রয়েছে। তাতে প্রধান বিচারপতি সিবিআই-কে সার্বিক ভাবে অন্য হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়েও তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন। (আরও পড়ুন: কিঞ্জলদের নামে ৪ কোটি তোলার অভিযোগ করা ডাক্তারের 'পর্দা ফাঁস'! সামনে নয়া 'তথ্য')
আরও পড়ুন: প্যান ডি থেকে শেলকাল, প্রকাশিত নিম্নমানের ওষুধের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, দেখুন একনজরে
উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনায় খুন থেকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ সহ আরও অনেকে। এর মধ্যে দুর্নীতি মামলাতেই আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। সেই দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হবে বলে সম্প্রতি আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র নেতা তথা চিকিৎসক আশিস পাণ্ডেও। সিবিআইয়ের দাবি, আরজি কর ছাড়াও অন্যত্র দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন সন্দীপ ঘোষ এবং আশিস পাণ্ডে। এদিকে আরজি কর দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ব্যবসায়ী সুমন হাজরা এবং বিপ্লব সিংহ। দাবি করা হচ্ছে, ২০১৪ সালে রাজ্য সরকারের নীতি বদলের জেরে হাসপাতালগুলিতে ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ভবনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কমে গিয়েছিল। এই আবহে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেই দুর্নীতি চক্র গড়ে উঠেছে। খাতায় কলমে ভুয়ো বিল দেখিয়ে সব ঠিক রাখা হচ্ছে। তবে সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে নিম্নমানের বা ভুয়ো ওষুধ। আর রাজ্য জুড়ে এই দুর্নীতি চক্র কয়েক হাজার কোটির হতে পারে বলে দাবি করছে সিবিআই। (আরও পড়ুন: লাদাখের বদলে অরুণাচলে চিনকে ছুট? সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বিস্ফোরক দাবি ওয়াইসির)
আরও পড়ুন: কোন অঙ্কে LAC নিয়ে চিনকে 'ঝুঁকতে বাধ্য করেছে' ভারত? সমীকরণ বোঝালেন জয়শংকর
এদিকে সম্প্রতি এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, সন্দীপ ও তাঁর আত্মীয়দের ব্যাঙ্কে বেআইনি লেনদেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট (বলা যেতে পারে 'ইডির এফআইরএর') দায়ের করে মামলার তদন্ত চলছে। এই তদন্ত চলাকালীন সন্দীপের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামে একাধিক সম্পত্তির দলিল উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, সন্দীপই নিজের আত্মীয়দের নামে এই সব সম্পত্তি কিনে থাকতে পারেন। এই আবহে সম্পত্তি কেনার ওই টাকা কোন উৎস থেকে এসেছে, তা জানতে সন্দীপের আত্মীয়দের লিখিত বয়ানও নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে গত ৪ অক্টোবর স্বাস্থ্যসচিব এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে সিবিআই দাবি করেছিল, আরজি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন দফতরের অধ্যক্ষ দেবাশিস সোম এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজাতা ঘোষ এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। এই আবহে এই দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিল সিবিআই। যদিও সেই চিঠি পেয়ে নাকি স্বাস্থ্য দফত জানিয়েছিল, ওই দু’জনের দুর্নীতির বিষয়ে তারা অবগত নয়। তবে সিবিআই-এর অভিযোগের ভিত্তিতে এবার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। প্রসঙ্গত, এর আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, সিবিআই যদি দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের নাম পাঠালে রাজ্য বিবেচনা করবে। এর পরেই দেবাশিস ও সুজাতার নাম উল্লেখ করে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিল সিবিআই।