সেই অভিশপ্ত রাতটা না এলে আজ তাঁদের বাড়িতে হয়তো পুজোর প্রস্তুতি চলত। মহালয়ার আগের সন্ধ্যায় দেবী দুর্গাকে কীভাবে আরাধনা করা হবে, সেটা নিয়ে হয়ত শেষমুহূর্তের আলোচনা করা হত। কিন্তু একটা অভিশপ্ত রাতেই সবকিছু পালটে গিয়েছে। মহালয়ার আগের সন্ধ্যাটা এমনভাবে কাটছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের বাবার, যা মেয়েকে স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে ভরতি করার সময়ও ভাবতে পারেননি। আর সেই কথাগুলো বলার সময় দেবীপক্ষের আগের সন্ধ্যায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন নির্যাতিতা তরুণীর বাবা। রবীন্দ্র সদনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, 'আমি মেয়েটাকে আরজি করে দিয়েছিলাম। সে গিয়েছিল রোগী পরিষেবা দিতে, পড়াশোনা করতে। আর সেই প্রিন্সিপাল প্রমাণ লোপাটের দায়ে জেলবন্দী। তার মানে বুঝতে হবে, কোন কোন রাক্ষসের কাছে আমি দিয়েছিলাম আমার মেয়েটাকে। প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি যে আরজি কর হাসপাতাল এত রাক্ষসের একটা জায়গা।'
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৎকালীন প্রিন্সিপাল তথা অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি নির্যাতিতার বাবা প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল? কাদের আড়াল করার জন্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘আমি অজ্ঞ…মুখে হাসি না থাকলে’ প্রতিবাদের কলকাতায় শ্রীভূমিতে উৎসবের উদ্বোধনে মমতা
‘আমার মেয়ের বাঁচার অধিকারটা এই দুষ্কৃতীরা ছিনিয়ে নিয়েছে’
তিনি বলেন, ‘আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। শুধু আমার মনে একটা কথা সবসময় (ঘুরপাক খাচ্ছে), ১৪০ কোটি লোকের বাঁচার অধিকার আছে। শুধু আমার মেয়ের বাঁচার অধিকারটা এই দুষ্কৃতীরা ছিনিয়ে নিয়েছে। কত যন্ত্রণা তাকে দিয়েছে।' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'তা সত্ত্বেও এতদিন হয়ে গেল, আমরা বিচারের কোনও প্রসেস দেখতে পাচ্ছি না। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা প্রমাণ লোপাটের জন্য গ্রেফতার হয়েছে। তারা কেন প্রমাণ লোপাট করেছে, সেই উত্তর আমরা এখনও পাইনি। তারা নিশ্চয়ই কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।’
‘কোনওদিনও ভুলতে পারব না….’
কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছেছি, আমাদের সারাদিন ওই অবস্থার মধ্যে সেমিনার রুমের গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছ। সেইসময়টা যে কি অস্বস্তিকর ছিল, আমি জীবনে কোনওদিন সেটা কাউকে বোঝাতে পারব না। আর ভুলতেও পারব না।’ আর সেই কথাগুলো বলতে-বলতে গলা ধরে আসে নির্যাতিতার বাবার। ভেঙে পড়েন কান্নায়।
'সুপ্রিম কোর্ট ও CBI-র উপরে আস্থা আছে'
সেইসবের মধ্যেই মেয়ের বিচারের জন্য সিবিআই এবং সুপ্রিম কোর্টের উপরে আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন তরুণী চিকিৎসকের বাবা। আর নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, সকলে যেভাবে তাঁদের পাশে আছেন, তাতে মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনবেন বলে বিশ্বাস আছে তাঁর।