আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ যে তদন্ত শুরু করেছিল, তার কি একেবারে গোড়াতেই গলদ ছিল? এই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্তের যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ আরজি করেরই মেডিক্যাল অফিসার তাপস প্রামাণিক।
শুক্রবার রাতে এবিপি আনন্দে সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাপস। সেখানেই তিনি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে একগুচ্ছ তথ্য তুলে ধরেন, যা নতুন করে সন্দেহের অবকাশ তৈরি করছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
তাপস জানান, গোটা বিষয়টি এখনও পর্যন্ত আদালতের বিচারাধীন থাকায় এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় তাঁর পক্ষে সমস্ত তথ্য তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে, নির্যাতিতার মৃতদেহের যে ছবি তাঁকে দেখানো হয়েছিল, তার সঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের বেশ কিছু অংশ তিনি মেলাতে পারেননি।
কোথায় কোথায় রয়েছে গলদের সম্ভাবনা?
নির্যাতিতার দেহের পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তাঁর শরীরে কোথাও নাকি কোনও 'ফ্র্যাকচার' নেই। অর্থাৎ, তাঁর শরীরের কোনও হাড় ভাঙেনি।
কিন্তু, তাপসকে মৃতদেহের যে ছবি দেখানো হয়েছিল, তাতে নির্যাতিতার দুই পায়ের অবস্থান ছিল পরস্পরের সাপেক্ষে ৯০ ডিগ্রি! যা সাধারণ কোনও পরিস্থিতিতে কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করেন আরজি করের মেডিক্যাল অফিসার।
তাঁর পর্যবেক্ষণ হল, প্রসবের সময় চিকিৎসকরা যেভাবে গর্ভবতী রোগীর দুই পা 'অ্য়ারেঞ্জ' করেন, তাকে বলে 'লিথোটমি পজিশন'। সেই অবস্থাতেও দুই পায়ের মধ্যেকার দূরত্ব বা অবস্থান ৯০ ডিগ্রি হওয়া সম্ভব নয়।
এই কারণেই তাপসের সিদ্ধান্ত, হাড় না ভাঙলে কখনই নির্যাতিতার দুই পায়ের অবস্থান এমন হতে পারত না। প্রশ্ন হল, তাহলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই কেন? তাপসের যুক্তি, আরজি করে খুব সম্ভবত ময়নাতদন্তের সময় মৃতদেহের এক্স-রে করা হয় না। সেই কারণেই নির্যাতিতার হাড় ভাঙার বিষয়টি সামনে আসেনি।
গরমিল আরও আছে। নির্যাতিতার মৃত্যু জন্য 'স্মদারিং অ্যান্ড ম্যানুয়াল স্ট্র্যাঙ্গুলেশন'-এর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশ প্রথম থেকেই বলে এসেছে, এই ঘটনার নেপথ্যে একমাত্র রয়েছেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়।
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন আরজি করের মেডিক্যাল অফিসার। তাঁর বক্তব্য, সঞ্জয় রায়ের মতো একজন মাত্র ব্যক্তির পক্ষে এভাবে খুন করা সম্ভবই নয়। বরং, এভাবে কাউকে মারতে হলে অন্তত চারজনের মিলিত শক্তি প্রয়োগ করা দরকার!
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি প্রথম থেকেই আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত ভুল পথে চালিত হচ্ছিল। উল্লেখ্য, এর আগে সংবাদমাধ্যমে স্বনামধন্য এক চিকিৎসক দাবি করেছিলেন, নির্যাতিতা সম্ভবত গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
এক্ষেত্রেও পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট উল্লেখ করে নির্যাতিতার শরীর থেকে উদ্ধার হওয়া 'সাদা রঙের চটচটে তরল' পদার্থকে সিমেন বলে মনে করা হয়েছিল এবং তার ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম বলেও দাবি করা হয়েছিল।
সেই ঘটনা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। এমনকী, সেই চিকিৎসককে কালকাতা পুলিশের তরফে ডেকেও পাঠানো হয়।