আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সিবিআই। এরই মাঝে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের কুণাল ঘোষ অভিযোগ করলেন, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচাতে 'খেলা' শুরু হয়েছে। এরই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তৃণমূল নেতা বিস্ফোরক সব দাবি এবং অভিযোগ করলেন। (আরও পড়ুন: পাসপোর্ট বাতিল বাংলাদেশের, আর ভারত নাকি বাড়িয়েছে হাসিনার ভিসার মেয়াদ: রিপোর্ট)
আরও পড়ুন: 'একটু জ্বর হলেই...', হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস শঙ্কার মাঝে এবার বিস্ফোরক মমতা
কুণাল ঘোষের কথায়, 'আরজি করের ঘটনা ভয়ঙ্কর। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা সবাই এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছি। আমরা সবাই চাই দোষীর ফাঁসি হোক। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমদিন থেকে বলছেন, মৃত্যুদণ্ড হোক। কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে ধরে। মৃতার বাবা-মার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমবেদনা রেখেই বলছি, তাঁরা কিছু লোকের কথায় ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরল। তাঁরা বললেন, আমরা সিবিআই চাই। তাঁদের দাবি মতো সিবিআই তদন্ত হয়েছে। এবার সিবিআই তদন্ত করে বলছে, কলকাতা পুলিশ যাকে ধরেছে সেটাই ন্যায্য। এবার তাঁরা সেটা মানতে পারছেন না। যাঁরা বলছেন, বিচার চাই, বিচার চাই। বিচার তো আদালতে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আবার নজরদারি চালিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে তো তাঁদেরও আইনজীবী ছিলেন। শুনানির সময় তো পূর্ণ সুযোগ ছিল, সুপ্রিম কোর্টে সবটা বলার।' (আরও পড়ুন: ১৪ বছর আগে কাঁটাতারে ঝুলে মৃত্যু বাংলাদেশি নাবালিকার, মা বললেন - 'ভারতকে যেন…')
এরপর কুণাল ঘোষ আরও বলেন, 'কিছু রাজনৈতিক অতৃপ্ত আত্মা, অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা থেকে নির্যাতিতার বাবা-মার আবেগ, যন্ত্রণাকে বিপথে চালিত করতে এই গোলমাল পাকাতে নেমেছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। সাজা ঘোষণার মুখে বলছে, নতুন করে তদন্ত চাই। তাহলে কি কেউ বা কারা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? ধর্ষণ ও খুনে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ধরেছে কলকাতা পুলিশ। তাকে মান্যতা দিয়েছে সিবিআই। সমস্ত তথ্য প্রমাণ এক জায়গায় করে সুপ্রিম কোর্ট দেখেছে। ট্রায়াল কোর্ট দেখেছে। এখন সাজা ঘোষণার মুখে মৃতার বাবা মাকে সামনে রেখে, তাঁদের আবেগকে বিভ্রান্তিকর পথে চালিত করে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচানোর খেলা চলছে।'
সম্প্রতি শিয়ালদা আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা। ৫৭ পৃষ্ঠার একটি বয়ান জমা দেন। তাঁরা দাবি করেছেন, সঞ্জয় একা নয়, মেয়েদের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার আরও কয়েকজন যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন। একজনের পক্ষে এরকম কাজ করা সম্ভব নয় বলে সওয়াল করেছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে তাঁরা দাবি করেছেন, যারা যারা ওই ঘটনায় যুক্ত আছে, তাদের খুঁজে বের করতে আরও তদন্ত করা হোক। সেইমতো যাতে চার্জশিট পেশ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা।
এদিকে আরজি কর কাণ্ডে সম্প্রতি সিএফএসএল-এর একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছিল যাতে দাবি করা হয়েছিল, নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে কোনও বীর্য মেলেনি। তবে সেখানে যে ডিএনএ মিলেছে, তা একাধিক ব্যক্তির মিশ্রিত ডিএনএ হতে পারে। আবার অপর এক রিপোর্টে দাবি করা হল, নির্যাতিতার যোনিদ্বারে যে ডিএনএ মিলেছে, তাতে এক মহিলার ডিএনএ উপস্থিত আছে। টিভি৯ বাংলার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, নির্যাতিতার যোনিদ্বার থেকে মেলা ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, D12S391 মার্কারে অন্য মহিলার সঙ্গে নির্যাতিতার নমুনার মিশ্রণ স্পষ্ট। সেই অন্য মহিলার জেনোটাইপ হল 16/22।
জানা যায়, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ২৯টি ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণ কর হয়েছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি বা সিএফএসএলের রিপোর্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে নাকি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, নির্যাতিতার বৃহৎ অন্ত্রের শেষ ভাগ, স্তনবৃন্ত, যোনিদ্বারে ডিএনএ নমুনায় 'গোলমেলে ইঙ্গিত' রয়েছে। দাবি করা হয়েছে, নির্যাতিতার বৃহৎ অন্ত্র সহ বেশ কিছু অঙ্গ থেকে যে ডিএনএ-র নমুনা মিলেছে, তা এক নারীর। তবে সেই নমুনার কয়েকটি মার্কারে ইঙ্গিত মিলেছে যে সেই ডিএনএ নির্যাতিতার নয়। তা সঞ্জয়েরও নয়। এই আবহে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে অন্য এক মহিলার ডিএনএ এল নির্যাতিতার দেহে? এদিকে রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, স্তনবৃন্ত থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, তার সাথে সঞ্জয়ের ডিএনএ মিলে যাচ্ছে। তবে ৪টি অটোসোমাল মার্কার বিশ্লেষণে নাকি অন্য পুরুষেরও ডিএনএ থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। এই আবহে ফের আরজি কর কাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এই আবহে আরজি কর মামলায় সিবিআই ফাইনাল সাবমিশনে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানায়।