আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের নয়া আইনজীবী হলেন যশ জালান। এবং সেই দায়িত্ব পেয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন যশ। তাঁর দাবি, এই মামলায় তিন জনের নাম সামনেই আসেনি। এই নামগুলিকে আড়াল করতেই রাজ্য সরকার সঞ্জয় রায়কে তড়িঘড়ি ফাঁসি দিতে চাইছে বলে অভিযোহ করলেন জালান। উল্লেখ্য, এখনও ওকালতনামায় সঞ্জয় সই করতে পারেনি সঞ্জয় রায়। তবে হাই কোর্টে সিবিআই এবং রাজ্যের করা মামলায় দোষীর হয়ে তিনি সওয়াল করার অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন যশ। (আরও পড়ুন: 'আওয়ামি লিগ যদি দিল্লির কোলে বসে…', নির্বাচনে হাসিনার দলে 'না' ইউনুসের উপদেষ্টার)
আরও পড়ুন: এবার দূর হবে দুশ্চিন্তা, সরকারি কর্মীদের জন্যে চুপিসারে জারি হল নয়া বিজ্ঞপ্তি
যশ জালান বলেন, 'নিম্ন আদালতে খুব দ্রুতই ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এই মামলায় এমন তিনজন রয়েছেন, যাঁদের ক্রস এক্সামিনেশন করা হয়নি। তাঁদের নামও উল্লেখ করা হয়নি। সেই নামগুলো সামনে আসা দরকার। সঞ্জয় রায়ের জন্য রাজ্যের তরফে ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (ডিএলএসএ) নিয়োগ করা হয়। ডিএলএসএ-ও তাঁদের নাম আনতে চায়নি। কারণ, তারা রাজ্যের অধীনস্থ।' এদিকে টিভি৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্সি জেলে সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে ২ বার দেখা করতে গিয়েছিলেন যশ। তাঁর অভিযোগ, জেল কর্তৃপক্ষ নাকি সঞ্জয়কে ওকালতনামায় সই করতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, 'আমার সামনেই সঞ্জয়কে সাদা কাগজে সই করতে বলে। আমি বাধা দিই। সঞ্জয়কেও বলি, আইনজীবীর সঙ্গে কোনও কথা না বলে সাদা কাগজে সই করবেন না। নিজের পক্ষে প্রাইভেট ডিফেন্স কাউন্সেলকে দাঁড় করাতে চান সঞ্জয়। কিন্তু, তাঁর উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে লিগ্যাল এইডের সাহায্য নেওয়া হয়। জেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করছে।'
যশের বক্তব্য, 'শিয়ালদা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। সেখানে সঞ্জয় রায়কে পার্টি করা হয়। এই আবহে সঞ্জয় রায় স্টেস লিগ্যাল এইডের ওকালতনামায় সই করেছেন বলে দাবি করছে জেল কর্তৃপক্ষ। যদিও সঞ্জয় নিজে বলছেন, এরকম কোনও ওকালতনামায় তিনি সই করেননি। এমনকী তিনি তো জানেনও না যে তাঁকে ওই আবেদনে পার্টি করা হয়েছে। এই আবহে আদালত আমায় অনুমতি দিয়েছে, ওকালতনামায় সই ছাড়াই সওয়াল করতে পারি।' এরপর তিনি বলেন, 'এই মামলাটা অনেক হাই প্রোফাইল বিষয় হয়ে গিয়েছে। রাজ্য চাইছে না যে আসল লোক ধা পড়ুক। রাজ্য চাইছে যাতে সঞ্জয়কে ফাঁসি দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। যদি অন্যদের নাম সামনে আসে, অনেক সমস্যা তৈরি হবে।'
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত শনিবার আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।
এই মামলা নিয়ে শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ ছিল, আদালতের দায়িত্ব মানুষের ভাবাবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলা। আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রেখে আদালতকে কাজ করতে হয়। বিচারক বলেছেন, ‘আদালতকে অবশ্যই জনগণের চাপ বা মানবিক আবেদনের কাছে মাথানত করার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে হবে। বরং এমন একটা রায়দানের উপরে মনোনিবেশ করতে হবে, যা আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে পূরণ করে।’ এদিকে এর আগে এক মামলায় ফাঁসির সাজা শোনানোর নজির ছিল বিচারক দাসের। অপরদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি পকসো মামলায় আসামিদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইছিলেন অধিকাংশ মানুষ। তবে বিচারক ফাঁসির সাজা দেননি। এরই সঙ্গে তাঁর রায়ে তদন্তের গাফিতলির বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। এই আবহে বিচারকের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার এবং সিবিআই।