আরজি কর মামলায় ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে রায়। আজ সোমবার, এই মামলায় সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করবে শিয়ালদা আদালত। আর তার আগেই সঞ্জয়ের মা মালতি রায় বললেন, 'দোষী হলে ছেলেকে ফাঁসি দেওয়া হোক, আমার কোনও আপত্তি নেই।' উল্লেখ্য, এর আগে রায় ঘোষণার পরপরই সঞ্জয় রায় আদালতেই ফের একবার দাবি করেছিল, সে এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। এমনকী সে এমনও দাবি করেছিল, আইপিএস অফিসাররা তাকে যা বলতে বলেঠিল, সে সেটাই বলেছিল সেই সময়। তবে বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন, সিবিআইয়ের পেশ করা তথ্যপ্রমাণে তিনি সন্তুষ্ট। এই আবহে সঞ্জয়কে সাজা পেতেই হবে। সেই রায়ের পর সঞ্জয়ের বোন জানিয়েছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন না। আর এবার ছেলের সাজা নিয়ে মুখ খুললেন সঞ্জয়ের মা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, সঞ্জয় রায়ের মা বলেন, 'যদি আদালত ছেলেকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। আইনের চোখে তার দোষ প্রমাণিত হয়েছে। আমি আমার ভাগ্যের ওপর একা একা কাঁদব। এটাই ভবিতব্য।' শিয়ালদা আদালত থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বেই থাকেন সঞ্জয়ের মা। গত শনিবার এই শিয়ালদা আদালতই আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করে। এই আবহে সঞ্জয়ে মা জানান, যদি ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা হত, তাহলে তিনি শুনানিতে অংশ নিতেন। তিনি বলেন, 'আমার শরীর খারাপ। তে যদি ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা হত, তাহলে আমি শুনানিতে যেতাম।'
এদিকে আরজি করের নির্যাতিতার মায়ের প্রতি নিজের সহানুভূতি ব্যক্ত করেন সঞ্জয়ের মা। তিনি বলেন, 'সেই ডাক্তারের মায়ের কষ্ট আমি অনুভব করতে পারছি। সেই ডাক্তার আমার মেয়ের মতোই।' এর আগে সঞ্জয় একাধিকবার দাবি করে, সে নির্দোষ। শনিবারও সে আদালতে বলে, 'আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা আছে। আমি যদি ধর্ষণ করি, তাহলে সেটা ছিঁড়ে গেল না কেন?' শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে প্রমাণ আছে, সেটার ভিত্তিতে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ) ধারা, ৬৬ ধারা (ধর্ষণের এমন আঘাত করা, যে কারণে মৃত্যু হতে পারে) এবং ১০৩ (১) ধারায় (খুন) দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরদিনই সিভিক ভলান্টিয়াারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৩ অগস্ট পুলিশের হাত থেকে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। ৭ অক্টোবর শিয়ালদা আদালতে চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে মূল অভিযুক্ত করে সেই চার্জশিট পেশ করা হয়। এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের তরফে ওই একটা চার্জশিটই দাখিল করা হয়েছে। কোনও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করেনি।
৪ নভেম্বর শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। ১১ নভেম্বর থেকে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের আদালতে। ২১ ডিসেম্বর সঞ্জয়ের কথা শোনা যায়। জানুয়ারির শুরুতেই সঞ্জয়ের আইনজীবী দাবি করেন, সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফাঁসানো হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে খামতি রয়েছে। পুরো ঘটনা পরে সাজানো হতে পারে বলে দাবি করেন সঞ্জয়ের আইনজীবী। আর ৯ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।