এর আগে শিয়ালদা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সরাসরি কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার বিনীত গোয়েলের নাম নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিল সঞ্জয় রায়। আর এবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতে বিচারক ১০০-র ওপর প্রশ্ন করেছিলেন সঞ্জয় রায়কে। সেই প্রশ্নমালার ৩২ ও ৩৩ নম্বর প্রশ্ন ছিল বাজেয়াপ্ত হওয়া ব্লুটুথ, বায়োলজিকাল এভিডেন্সে থাকা সঞ্জয় রায়ের চুল, তাঁর দেহে থাকা ক্ষত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই সময়ই প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের 'যুক্তি' তুলে ধরেছিল সঞ্জয়। এরই সঙ্গে বিনীত গোয়েলের নামেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিল সে। (আরও পড়ুন: আরজি কর মামলায় আদালতের রায়ের কপি নিয়ে জেলে ঘুরছে সঞ্জয় রায়, বলছে...)
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে খুন করে দেহ কেটে মাংস প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করেছি… স্বীকার করল স্বামী
আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, সঞ্জয় আদালতে জানিয়েছিল, গত ৯ অগস্ট তার গলায় ছিল একটি রুদ্রাক্ষের মালা। তবে গ্রেফতারির পর সেই মালা পুলিশ খুলে নিয়ে নেয়। আদালতে সাজা ঘোষণার সময়ও এই মালার উল্লেখ করেছিল সঞ্জয়। সঞ্জয়ের যুক্তি, যদি সে ধর্ষণ করত, তাহলে সেই মালা ছিঁড়ে যেত। এদিকে সঞ্জয় অভিযোগ করে, গ্রেফতারির পরে পুলিশ তাকে লকআপে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছিল। সেই সময় তার চুলের মুঠি ধরে মারা হয়েছিল। তখন সেখান থেকে তার চুল পুলিশের কাছে চলে এসে থাকতে পারে এবং পরে তা 'প্লান্ট' করে হতে পারে প্রমাণ হিসেবে। এদিকে সঞ্জয় দাবি করে, সেই সময় এক আইপিএস অফিসার তাকে বলেছিল, 'খুন, ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করে নাও। পরে সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।' তবে সে স্বীকার না করায় নাকি সোজা তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিনীত গোয়েল তাকে নিজে বলেছিলে সব কিছু স্বীকার করে নিতে। তবে তারপরও সে কিছু স্বীকার না করায় তাকে ফের মারধর করা হয়েছিল। (আরও পড়ুন: আসছে বদল, হাওড়া-এসপ্ল্যানেড রুটে মেট্রো চলাচল নিয়ে সামনে বড় সুখবর)
আরও পড়ুন: এবারের বাজেটে আয়করের নয়া স্ল্যাব আনতে পারে কেন্দ্র, মিলতে পারে ছাড়: রিপোর্ট
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়। এই রায়দানের আগে ২০ জানুয়ারি যে শুনানি হয়, সেই সময় বিচারক সঞ্জয় রায়কে কথা বলতে দিয়েছিলেন। সেই সময় সঞ্জয় দাবি করেছিল, সে নির্দোষ। তখনই ফের রুদ্রাক্ষের মালার কথা সে তুলে ধরেছিল। তখন বিচারক বলেছিলেন, তার কথা তুলে ধরতে আদলত তাকে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল এর আগে। জানা যাচ্ছে, সেই ‘তিন ঘণ্টার’ সময়কালেই বিচারকের প্রশ্নের জবাবে আইপিএস-দের নামে অভিযোগ করেছিল সঞ্জয় রায়।