অধীররঞ্জন চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করার পর আবার দুটি গোষ্ঠী দেখা যাচ্ছে বিধান ভবনে। এক, অধীররঞ্জন গোষ্ঠী। দুই, প্রয়াত প্রদেশ সভাপতি সোমেন গোষ্ঠী। এখন প্রশ্ন উঠছে, আরও বড় অস্বস্তির মুখে পড়তে চলেছে বিধান ভবন? সোমেন মিত্রের পুত্র রোহন মিত্র যেসব টুইট করেছেন, তাতেই উস্কে দিয়েছে জল্পনা। তাঁর টুইটে প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তাঁর সাফ বক্তব্য, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ‘শ্রদ্ধাশীল’।
সোমেন–মমতা সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইতিহাস রাজ্য–রাজনীতিতে চর্চিত। কারণ কংগ্রেস ভেঙে সোমেন ‘প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস’ তৈরি করেছিলেন। পরে তা তিনি মিশিয়ে দেন তৃণমূলে। মমতার দেওয়া টিকিটে তিনি ২০০৯ সালে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন। তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্র পর পর দু’বার তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হন। পরে মনোমালিন্যে সোমেন সাংসদপদ ছাড়েন। শিখাও বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। দু’জনেই কংগ্রেসে ফেরেন। ২০১৮ সালে ফের প্রদেশ সভাপতি হন সোমেন।
এবার সোমেনের পুত্র রোহন ‘বেসুরে’ গাইতে শুরু করেছেন। যা প্রদেশ কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অস্বস্তি বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার কংগ্রেস বিধায়ক কাজি আবদুর রহিম (দিলু) কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই দিলুর দলত্যাগের পর ৭ নভেম্বর পর পর তিনটি টুইট করেন রোহন। সেখানে উল্লেখ রয়েছে— লাগাতার অসম্মান করে উত্তর ২৪ পরগনার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ককে দল ছাড়তে বাধ্য করা হল! লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে দিলুর সমঝোতার দলীয় তত্ত্বও রোহন নস্যাৎ করে বলেন, কোনও তারকা প্রচারক ছাড়াই দিলু ১ লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।
বেচারাম মান্নাকে নিয়েও টুইট করেছেন রোহন। সে টুইটে রোহন বেচারামের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘যাঁদের একদিন কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ই ছিল না, আস্তাকুঁড় থেকে তাঁদের তুলে এনে কখনও প্রয়াত সোমেন মিত্র বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা একদিন সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা কি আজ অন্য গন্ধ পেয়ে বেইমানির পথে হাঁটছেন?
’ শুক্রবার সোমেন–পুত্র টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ কলকাতার ভোটার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার জেলা কংগ্রেসের কর্মী সম্মেলনে ডাকা হল না কার নির্দেশে?
তাহলে কী তৃণমূলে যাচ্ছেন রোহন মিত্র? রোহন এদিন বলেন, ‘বাবার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক লড়াই ছিল ঠিকই। কিন্তু বাবা কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিকভাবে ছোট করার চেষ্টা করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে তৃণমূলস্তর থেকে উঠে এসেছেন, বাবা সেটাকে সবসময় সম্মানের চোখেই দেখতেন। কারণ, বাবা নিজেও তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই করে উঠে আসা নেতা ছিলেন।’ তবে পরবর্তী ধাপ কি হবে, তা ভেঙে বলেননি তিনি।