নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু’র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলা নিয়ে এবার বিজেপির অন্দরেই অসন্তোষ দানা বাঁধল। সূত্রের খবর, শনিবার ভিক্টোরিয়ায় যা ঘটেছে, তা মোটেই ভাল চোখে দেখছে না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। এমনকী আরএসএস তা ভালভাবে নেয়নি। তাঁরা মনে করছে, নেতাজির জন্মদিবসের ওই সরকারি অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে, সেটা অনভিপ্রেত। ভোটের মুখে নেতাজি আবেগ নিয়ে কোনওরকম বিতর্কে না জড়ানোয় দলের পক্ষে মঙ্গল।
রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সহমত নয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। বরং সংঘের শীর্ষ নেতৃত্বই অসন্তুষ্ট। বিজেপি সূত্রে খবর, সেদিনের ঘটনায় বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। কারণ এই বার্তা এখন জেলায় জেলায় ছনিয়ে দিচ্ছেন বাংলার জননেত্রী। তাতে বিধানসভা নির্বাচনে ড্যামেজ কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যাবে। এটা বুঝতে পেরেই এখন এই হাওয়া আটকাতে চাইছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আর তাঁদের সেই কথা জানিয়েছে আরএসএস।
রাজনৈতিক মতানৈক্য ভুলে একসঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও তাল কাটে। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত দর্শকদের একাংশ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। নেতাজি সম্পর্কিত কোনও ভাষণই রাখেননি। মমতা দাবি করেন, তাঁকে ‘ডেকে এনে অপমান’ করা হয়েছে।
পুরশুড়ায় দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্জে ওঠেন, এতবড় সাহস কয়েকটা উগ্র গর্দভ ধর্মান্ধ আমায় টিজ করছে! দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে! ইতিমধ্যেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছে বাংলার সুশীল সমাজ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি অবশ্য দিলীপ ঘোষ জয় শ্রী রাম ধ্বনিতে ভুল কিছু দেখেননি। কিন্তু ভোটের আগে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে জয় শ্রী রাম জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সায়ন্তন বসুরা মনে করছেন, জয় শ্রীরাম স্লোগান মুখ্যমন্ত্রী সহ্যই করতে পারছেন না। যে স্লোগানই উঠুক না কেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ না দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়া কাম্য নয়। এই ঘটনায় আরএসএসও নাকি অসন্তুষ্ট। নিজেদের অসন্তোষের কথা সংঘ জানিয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের। যদিও, প্রকাশ্যে কোনও কিছুই স্বীকার করতে রাজি নন বিজেপির রাজ্য নেতারা। প্রদীপ জোশী ও ভাগাইয়াজি’র মতো সংঘের উপরতলার নেতৃত্ব এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংঘের অভিমত, স্থান–কাল–পাত্র না দেখে জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি। বহিরাগত ইস্যুতে যখন প্রচার চালাচ্ছেন মমতা, তখন অযথা তাঁর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া অজ্ঞতার পরিচয়।
সর্বভারতীয় সভাপতি জানতে চেয়েছেন, ওই দিন জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেওয়ার নেপথ্যে কে বা কারা? এটা স্বতঃস্ফূর্ত জয়ধ্বনি নাকি গোটাটাই পরিকল্পিত? এখন আসল মাথাকে খুঁজতে চাইছে বিজেপি। ওই অনুষ্ঠানে কোন মাপকাঠিতে কার্ড দেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে সংঘের রুদ্রমূর্তিতেই এখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে খবর।