সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিল শিয়ালদা আদালত। শনিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সঞ্জয়কে দোষীসাব্যস্ত করার পরে সোমবার দুপুরে সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস।তিনি জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনাকে ‘বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ’ বলে মনে করছেন না। তাই আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে সঞ্জয়কে। জরিমানাও করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সঞ্জয় এবং নির্যাতিতার পরিবারের সামনে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।
কড়া নিরাপত্তা বলয় শিয়ালদা আদালতে
সোমবার সকাল ১০ টা ১৫ মিনিট সঞ্জয়কে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারকে বের করে আনা হয়। তারপর সকাল ১০ টা ৪০ মিনিট নাগাদ শিয়ালদা আদালতে নিয়ে আসা হয় দণ্ডিতকে। ততক্ষণে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে আদালত চত্বর। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়। দু'জন ডেপুটি কমিশনার, পাঁচজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার-সহ কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসাররা মোতায়েন আছেন।
সেই কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই প্রচুর মানুষ আদালত চত্বরে জড়ো হয়েছেন। কেউ-কেউ তো রেলিং টপকে সঞ্জয়কে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন। তবে পুলিশের ঘেরাটোপ থেকে আরজি কর মামলার দণ্ডিতকে কার্যত দেখা যায়নি। যে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ) ধারা, ৬৬ ধারা (ধর্ষণের এমন আঘাত করা, যে কারণে মৃত্যু হতে পারে) এবং ১০৩ (১) ধারায় (খুন) দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সঞ্জয় ক্যারমও খেলেছে!
যদিও তারপরও সঞ্জয়ের আচরণে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। সূত্রের খবর, সাজা ঘোষণার আগেরদিন সকালে সঞ্জয়ের মধ্যে তেমন কোনও পরিবর্তন ধরা পড়েননি। শনিবার কিছুটা চুপচাপ থাকলেও রবিবার সকাল থেকেই সঞ্জয় নিজের 'ছন্দে' ছিল। অন্যান্য দিনের মতো খাবার খেয়েছে (দোষীসাব্যস্ত হওয়ার রাতে অবশ্য কিছু খায়নি)। খেলেছে ক্যারম। নিজের মতো ঘুরিয়ে বেড়িয়েছে।
'এরকম অপরাধীদের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নেই'
তারইমধ্যে নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা জানিয়েছেন, শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের উপরে আস্থা আছে। আদালত ন্যায়বিচার দেবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। তবে সিবিআইয়ের তদন্তে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন মা।
আরও পড়ুন: RG Kar Case Judge: আগেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, আরজি কর মামলার রায় দেবেন সেই বিচারক দাস, রইল তাঁর পরিচয়
সোমবার সকালে বাড়ি থেকে শিয়ালদা আদালতে আসার আগে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা বলেছেন, 'এই ঘটনায় শুধুমাত্র একজন জড়িত নয়। কিন্তু বাকিদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। ভবিষ্যতে যদি আমরা অপরাধ আটকাতে চাই, তাহলে এরকম অপরাধীদের সমাজে বেঁচে থাকার কোনও থাকার অধিকার নেই।'
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে সাজা ঘোষণার আগে আদালতকে ধন্যবাদ মমতার, মুখে নিলেন না CBI-এর নাম
আরজি কর মামলার ইতিবৃত্ত
৯ অগস্ট, ২০২৪: আরজি জর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
১০ অগস্ট, ২০২৪: সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জয়কে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে কলকাতা পুলিশ।
১৩ অগস্ট, ২০২৪: কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার কেড়ে নেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
১১ নভেম্বর, ২০২৪: শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
৯ জানুয়ারি, ২০২৫: আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫: সঞ্জয় রায়কে দোষীসাব্যস্ত করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক।
২০ জানুয়ারি, ২০২৫: সাজা ঘোষণা করল শিয়ালদা আদালত।