ইনফোসিসকে যাতে কোনওভাবে ‘ডিস্টার্ব’ করা না হয়, শওকত মোল্লাকে সেই ‘রিকোয়েস্ট’ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নিউ টাউনের হাতিশালায় ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের নয়া ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিয়ে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক শওকতের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে শওকত মোল্লাও আছে। আমার একটা আর্জি (রিকোয়েস্ট) আছে। প্লিজ দেখো যাতে সবরকমভাবে সর্বস্তরে ওদের সহযোগিতা করতে পারি আমরা, সমন্বয় রক্ষা করতে পারি আমরা।’ আর মমতার সেই ‘রিকোয়েস্ট’-র প্রেক্ষিতে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা তাঁর কাছে ‘আদেশ’।
মমতার মন্তব্যের পরে শওকত দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে যে দায়িত্ব দেবেন, সেটা পালনের চেষ্টা করবেন। মমতা যা বলেন, সেটা তাঁর কাছে আদেশ। ভাঙড় সংলগ্ন এলাকায় বড়-বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা লগ্নি করছে। আর সেজন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। শান্তি থাকলেই বিনিয়োগ আসবে বলে দাবি করেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক।
শওকতদের সামালনোর নির্দেশ পুলিশকেও?
তবে শুধু একা তাঁকে দায়িত্ব দেননি মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা পুলিশ এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকেও সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিনিয়োগ আসছে, সেটা ‘সীমান্ত’ এলাকা। তাই পুলিশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। দুই বাহিনীর মধ্যে বজায় রাখতে হবে সমন্বয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলন, ‘নো ডিস্টার্বনেস, নাথিং। ওদের (ইনফোসিস) অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দিতে হবে।’
‘দাদাগিরি’ থেকে সিন্ডিকেট- হামেশাই অভিযোগ ওঠে
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দিয়েছেন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা বড় ‘দুর্নাম’ আছে, এখানে এত ‘দাদাগিরি’ চলে যে ঠিকমতো কাজ করা যায় না। ‘দাদাগিরি’, সিন্ডিকেটের দাপটে বিনিয়োগ লাটে ওঠার অবস্থা হয়।
সেইসঙ্গে নিউ টাউনের ক্যাম্পাসের কাছে ‘উত্তেজনাপ্রবণ’ ভাঙড়ও অবস্থিত। সেখান থেকে হামেশাই অশান্তির খবর সামনে আসে। সেটার রেশ এসে যাতে ইনফোসিসের উপরে না পড়ে, সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম সব ঘটনায় যোগ থাকার অভিযোগ তোলেন বিরোধী নেতারা, তাঁকেই ‘গুরুদায়িত্ব’ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী 'সঠিক রাস্তায়' ফেরানোর চেষ্টা করেছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে বার্তা দেওয়া হল
আর ওই মহলের মতে, ইনফোসিসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং ‘রিকোয়েস্ট’ করেছেন, সেটার মাধ্যমে তিনি অন্যান্য শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন যে রাজ্যের একেবারে শীর্ষস্তর থেকে নিশ্চিত করা হচ্ছে যে বাংলায় বিনিয়োগ করলে ‘ডিস্টার্ব’-র মুখে পড়তে হবে না।