গত কয়েক বছর ধরে জলের মতো টাকা ‘বিলিয়েছেন’ হুগলির যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। আর সেই টাকা একদিকে ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তী বা অভিনেতা বনি সেনগুপ্তর মতো ব্যক্তিত্বদের কাছে গিয়েছে। অন্যদিকে তা পৌঁছেছে হুগলির তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। টলিউডের অভিনেতা–অভিনেত্রীদেরও বিভিন্ন ইভেন্টের কাজের জন্য টাকা দিতেন বলে তথ্য পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
ইডি সূত্রে খবর, ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক অভিজাত আবাসনে তাঁর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যেই বসত ‘রেভ পার্টি’র আসর। নায়ক–নায়িকা থেকে উঠতি মডেল ওখানে আসতেন। রাতভর চলত হুল্লোড় থেকে নিষিদ্ধ মাদক সেবন। এমনকী ওই পার্টিতে নিয়মিত দেখা যেত দুই ড্রাগ কারবারিকে। তারা সেখানে নিষিদ্ধ মাদক সরবরাহ করত বলে তথ্য পেয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার ওই দুই মাদক কারবারির সঙ্গে কুন্তল ঘোষের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। আর টাকা ‘বিলি’র তালিকায় টলিউডের আরও ৬ জন অভিনেতা–অভিনেত্রী রয়েছেন, এই তথ্যও পেয়েছে ইডি অফিসাররা।
কুন্তল ঘোষের মাধ্যমে বনি সেনগুপ্তর সঙ্গে পরিচয় হয় সেটা ইডির কাছে স্বীকার করেছেন নিউটাউনের ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তী। কুন্তল ঘোষের সঙ্গে টলিপাড়ার নায়ক–নায়িকা ও মডেলদের যোগ মিলেছে। যুবনেতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সন্তানদের জন্মদিনের পার্টিতে হাজির থেকেছেন তাঁরা। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় কাউকে গাড়ি বা ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছে। কুন্তলের ব্যাঙ্কের নথিতে অভিনয় জগতের গ্ল্যামার গার্লদের সঙ্গে টাকা লেনদেনের হদিশ পেয়েছেন ইডি অফিসাররা। আবার সোমার পার্লারের উদ্বোধনের জন্য বনি সেনগুপ্তর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে বলা হয়েছিল। ‘পারিশ্রমিক’ নিয়েই কুন্তলের কথায় কৌশানী নিউটাউনে গিয়ে ওই পার্লার উদ্বোধন করেন।
ইডির হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, মাদক কারবারিদের সঙ্গে যুবনেতার পরিচয় হয় একটি অভিজাত ক্লাবে। প্রথম প্রথম দু’জনের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে নিষিদ্ধ মাদক কিনতেন কুন্তল ঘোষ। তা সেবন করতেন ক্লাবে আসা সঙ্গিনীদের সঙ্গে। পরে রেভ পার্টিতেও যাওয়া শুরু করেন তিনি। কুন্তল ঘোষের বিভিন্ন সিনেমা এবং মিউজিক ভিডিয়ো–তে কাজ করেছেন বিভিন্ন নায়ক–নায়িকা। তাঁদের দিয়ে পুজো বা অন্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধনও করিয়েছেন এই ধৃত যুবনেতা। বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন করতে নিয়ে গিয়েছেন বহু মডেলকে। মোটা টাকা দিয়েছেন প্রত্যেককে। মাদক ব্যবসায় জড়িতদের মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি এখন উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।