রাস্তার পাশেই সারি সারি তাঁবু। প্রতিবারই এই শীতকালে গঙ্গাসাগর যাওয়ার আগে আসেন সাধু সন্তরা। কারোর পরনে গেরুয়া বসন। কেউ আবার অঘোরী বাবা। কালো পোশাকে আবৃত সারা শরীর। কেউ আবার কনকনে ঠান্ডায় একেবারে বস্ত্রবিহীন। তাঁরা বস্ত্র পরিধান করেন না সচরাচর।
একেবারে সাধুময় বাবুঘাট। এই যে এত সংসারী মানুষ, রোজকার জীবনযন্ত্রণায় জর্জরিত, খালি ছুটে চলা জীবন, তাঁদের মাঝে একেবারে নির্বিকার সাধুসন্তরা। অনন্তের সাধনা করছেন। ভক্তরা যেটুকু দান করছেন তার উপরেই চলছে।
শহুরে লোকজন আসছেন। আবার দূর গ্রাম থেকেও এসেছেন অনেকে। তাঁরা সংসারী মানুষ। সাধুর কাছে একটু আশীর্বাদ নিতে চান। যদি সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! এই আশায় আসছেন তাঁরা। 'নাগা সন্ন্যাসীদের'আখড়ায় রীতিমতো ভিড়। নিরাভরন গোটা শরীর। সারা গায়ে ছাই ভষ্ম।
বাবা পা দুটো একটু স্পর্শ করি! আকুল চোখে তাকিয়ে আছেন ভক্ত। অবাক চোখে তাকান সন্ন্যাসী। আসলে সেই সুদূর গুজরাট থেকে এসেছেন তিনি। বাংলা ঠিকঠাক বোঝেন না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হিন্দিতে বোঝানোর চেষ্টা করেন ভক্ত। ধুনির আগুন জ্বলছে। তার পাশ থেকে ছাই নিয়ে ভক্তের কপালে পরিয়ে দেন তিনি। বারবার প্রণাম করেন ভক্ত। আসলে এই যে পরম শান্তি, দশটা পাঁচটার কাজে ডুবে থাকা মানুষের একটু হলেও স্বস্তি।
সাধুরা কেউ এসেছেন প্রয়াগরাজ থেকে, কেউ এসেছেন গ্রেটার নয়ডা থেকে, কেউ আবার এসেছেন গুজরাট থেকে। সবাই খুঁজছেন সেই পরশপাথর। কেউ দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ আবার ধুনি জ্বালিয়ে বসেছেন তপস্যায়, অঘোরী বাবা আবার তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে মানুষের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মিটিং, মিছিল, বহুতল আবাসন, শপিং মল, মেট্রো, লেটনাইট, বার, চায়ের দোকান, রোজকার দাম্পত্য কলহ, বাসের ভিড়, অফিসের ওপরওলার ধমক তার বাইরেও একেবারে অন্য়রকম। সাধুময় বাবুঘাট।
কাছেই গঙ্গা। কত জীবনের সাক্ষী এই নদী। তার কাছেই সারি সারি সাধুদের আখড়া। রাজ্য সরকারের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও রয়েছে। সাধুরা এখানে কিছুদিন থেকে কেউ চলে যাবেন গঙ্গাসাগরে, কেউ আবার কুম্ভতে। পূর্বাশ্রমের কথা বলতে নেই তাঁদের। এ এক অন্য় জীবন।
সমীরনাথ অঘোরী। পরনে কালো বস্ত্র। তাঁর আখড়ায় তৈরি হচ্ছে লুচি আলুরদম আর সুজি। গরম গরম। অন্যান্য সাধুদেরও তিনবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে তাঁর আখড়া থেকে। দল বেঁধে খাচ্ছেন অনেকে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ আখড়া হয়েছে। আমরা সেবা দিচ্ছি তিনবেলা।
এক অন্যরকম সেবাশ্রয়…