নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে মামলা গড়িয়েছে হাইকোর্টে। এবার সেই মামলা হাইকোর্টেরই অন্য বেঞ্চে সরানোর আর্জি জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে মামলা অন্যত্র সরানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু কেন? কারণ আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর মামলা যে বিচারপতির এজলাসে দেওয়া হয়েছে, তিনি আগে বিজেপির ‘সক্রিয় সদস্য’ ছিলেন। তাই তাঁর এজলাসে নন্দীগ্রাম মামলা উঠলে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এদিন নন্দীগ্রাম মামলা বিচারপতি চন্দের এজলাসে পাঠানোর প্রতিবাদে মুখে কালো মাস্ক এবং হাতে পোস্টার নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আইনজীবীরা। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বিচারব্যবস্থার সঙ্গে রাজনীতি করবেন না।’
আজ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কৌশক চন্দকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে বলে ছবিও প্রকাশ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। সেদিন মামলাকারী অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। বিচারপতি কৌশিক চন্দ এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন বলে খবর। তবে শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার পর আদালত চত্বরে আইনজীবীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। তাঁদের বক্তব্য, বিচারপতি কৌশিক চন্দ একসময় বিজেপির সদস্য ছিলেন। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মামলা তাঁর বেঞ্চে গেলে বিচারব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠবে। এই পরিস্থিতিতে মামলা অন্য বেঞ্চে স্থানান্তর করার আবেদন জমা পড়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর আইনজীবী আবেদনে জানান, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কৌশিক চন্দকে স্থায়ী বিচারপতি করার জন্য চিঠি দেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তখন আপত্তি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ওই বিচারপতি বিজেপির সক্রিয় সদস্য। সুতরাং তিনি পক্ষপাতদুষ্ট। তাই অনুরোধ করছি, পক্ষপাত এড়ানোর জন্য মামলাটি অন্য বেঞ্চে পাঠানো হোক। আবার ডেরেকের প্রশ্ন, ‘বিচারব্যবস্থা আর কতটা নিচে নামবে?’ আরেকটি টুইটে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দাবি করেন, বিচারপতি চন্দ আইনজীবী হিসেবে বিজেপির হয়ে একাধিক মামলা লড়েছেন। মমতা সরকারের ইমাম ভাতা চালুর বিরোধিতা করা থেকে শুরু করে অমিত শাহর সভার অনুমতির মতো মামলায় বিজেপির পক্ষ নিয়ে লড়তে দেখা গিয়েছে বিচারপতি তাঁকে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে ওঠে নন্দীগ্রাম মামলা। বিচারপতি কৌশিক চন্দ জানান, জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী নির্বাচনী আর্জিতে মামলাকারীকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী হাজির থাকতে পারেন কি না তা জানতে চান বিচারপতি। মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, ‘আইনে যা সংস্থান আছে তা মেনে চলব।’ তারপরই বিচারপতির অতীত ইতিহাস ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এই মামলা অন্য বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয় প্রধান বিচারপতির সচিবকে।