শহরে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায়ই পথ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই সম্প্রতি বেপরোয়া গাড়ি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুলিশ। এবার থেকে সংশ্লিষ্ট থানার সাব ইন্সপেক্টরাও চালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। এই মর্মে একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) রূপেশ কুমার। এতদিন শুধুমাত্র ট্রাফিক পুলিশ চালকদের লাইসেন্স সাসপেন্ড করতে পারত। তবে নতুন নির্দেশিকা জারি হওয়ার ফলে এবার যে কোন থানার এসআইরা চালকদের লাইসেন্স সাসপেন্ড করার বিষয়ে আবেদন জানতে পারবেন। ইতিমধ্যেই কলকাতার সমস্ত থানার ওসিদের কাছে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আরটিও বা এআরটিও–র কাছে নিয়ম মেনে লাইসেন্স সাসপেন্ড করার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন এসআইরা। কলকাতা পুলিশের এই বিজ্ঞপ্তির পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবহণ সংগঠনগুলি। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে লাইসেন্স পেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন চালকরা।
আরও পড়ুন: মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড করতে কড়া পদক্ষেপ
সাধারণত আগে ট্রাফিক পুলিশ লাইসেন্স সাসপেন্ড করলে তা সর্বোচ্চ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সাসপেন্ড থাকত। পরে আবেদনের ভিত্তিতে লাইসেন্স ফিরে পেতেন চালকরা। কিন্তু নতুন নিয়মে তা নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলেই মনে করছেন বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনের কর্তারা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত শহরে বেপরোয়া গাড়ি এবং বাইক আরোহীদের রুখতে এই নিয়ম জারি করা হয়েছে। তবে ছোটখাটো পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে লাইসেন্স সাসপেন্ড হলে বেসরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যহত হতে পারে বলে আশঙ্কা বেসরকারি সংগঠনগুলির। তাঁরা চাইছেন নয়া নির্দেশ কার্যকর করার আগে বিষয়টি আরও একবার পুলিশ ভেবে দেখুক। যদিও বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলি রাজ্যের পরিবহণ দফতরের কাছে এ বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানাননি। তাঁরা মৌখিকভাবে পরিবহণ দফতরের কাছে আপত্তির বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বেসরকারি সংগঠন সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা জানান, পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয় ভালো বোঝে পরিবহণ দফতর। তাই তাদের হাতেই এই বিষয়টি ছেড়ে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘এসআইদের হাতে লাইসেন্স সাসপেন্ড করার সুপারিশের ক্ষমতা গেলে গাড়ি চালকদের জীবনে তার প্রভাব পড়তে পারে। কোনও গাড়ি চালকের লাইসেন্স যদি ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সাসপেন্ড হয়ে যায় তাহলে তিনি বেকার হয়ে যাবেন। এই অবস্থায় তাঁর পরিবারের দায় কে নেবে?’ তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই নির্দেশিকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ হলে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তা হলে কেন এসআইদের হাতে এই ক্ষমতা দেওয়া হল তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। এরকম হলে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে কোনও চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ জারি করেছিল কলকাতা পুলিশ। শুধু মদ্যপ চালকই নয়, গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বললেও সে ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলা হয়েছিল ওই নির্দেশিকায়। আর এবার এসআইদের হাতে এই ক্ষমতা দেওয়া হল।