ছেলের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে থানার মধ্যে ঢুকে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক বৃদ্ধা। অবশ্য কেরোসিন তেল গায়ে ঢেলে আগুন ধরানোর আগেই তাঁকে ধরে ফেলেন মহিলা পুলিশ কর্মীরা। ফলে, অঘটন এড়ানো গিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর থানার মধ্যে।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে যান পুলিশ কর্মীরা। পরে অবশ্য বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের বন্দর ডিভিশনের ডিসি জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, ‘ বৃদ্ধা সমস্ত রকমের সাহায্য করা হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
বৃদ্ধার অভিযোগ, তাঁর ছেলে তাঁকে দেখাশোনা করে না। দিনের পর দিন মারধর করে ঘর থেকে বার করে দিত। এমনকী, তাঁরা যে ঘরে থাকতেন, সেখান থেকে তাঁদের বার করে শুধু স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে চাইছে ছেলে। এমনকী, তাঁর স্বামীর ভাতের হোটেলও দখল করে নিতে চাইছে তাঁদের ছেলে বলে অভিযোগ। বৃদ্ধার আরও অভিযোগ, বারবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। সে কারণে এদিন থানায় ঢুকে গায়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন ওই বৃদ্ধা।
ওই বৃদ্ধা বলেন,‘ পাড়ার কয়েকজনকে এ ঘটনার কথা বলেছিলাম। তারাই বুদ্ধি দিয়েছিলেন যে, থানায় কেরোসিন তেল নিয়ে যাও, এভাবে সত্যিই বেঁচে থাকা যায় না। তাই এই পথ বেছে নিয়েছিলাম। এই কাজ করেছি বলেই তো আজ পুলিশ এত কথা শুনল।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে একবালপুর থানায় যান বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধা। সরাসরি তদন্তকারী অফিসারের ঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। তারপর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ কর্মীর কথায়,
‘ অফিসারের ঘরে ঢুকে এক বৃদ্ধা মরতে চাই বলে চেঁচামেচি করতে শুরু করেন। সঙ্গে করেই একটি কেরোসিন ভরতি প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। আচমকা সেটি বার করে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে নেন তিনি। দেশলাই বার করে গায়ে আগুনও ধরাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার কাছাকাছি থাকা একজন মহিলা কনস্টেবল সেটি দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধার হাত চেপে ধরেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, এরপরই বৃদ্ধাকে ধরাধরি করে থানার বাইরে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। তারপর তাঁর গায়ে মাথায় জল ঢেলে তাঁকে শান্ত করে বিচার দেওয়ার আশ্বাস দেন পুলিশকর্মীরা। তারপরেই থানার ওসির ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। ঘরে বসে বৃদ্ধার অভিযোগ শোনেন পুলিশ অফিসাররা।
নির্যাতিতা বৃদ্ধা জানিয়েছেন, আগে তাঁরা মেটিয়াবুরুজ এলাকায় থাকতেন। কয়েক বছর ধরে সেখানে থেকে উঠে ইকবালপুর লেনের ওই বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এখনও সেখানেই স্বামী, মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন ওই বৃদ্ধা। স্বামী যা আয় করেন তাতেই তাঁদের সংসারটা চলে।
তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ তাঁর তেত্রিশ বছরের ছেলে কোনও কাজ করেন না। প্রায় মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে মারধর করে বলে অভিযোগ। বছর সাতেক আগে এক মহিলার সঙ্গে ছেলের বিয়ে হয়। অভিযোগ, ওই মহিলা তাঁর প্রথম পক্ষের স্বামীকে ছেড়ে এই বাড়িতে এসে ওঠেন। কিন্তু এখন তাঁদের ঘর থেকে বার করে দিতে চাইছে তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ বলেও অভিযোগ তাঁর। বৃদ্ধার আরও অভিযোগ, এই ঘটনা নিয়ে তিনি আগেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু তাঁর অভিযোগের কোনও সুরাহা হয়নি। বারবার থানায় গেলেও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এদিন সকালে ছেলে মদ্যপ অবস্থায় এসে তাঁকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকী, তাঁকে বাঁচাতে এসে ছেলের হাতে মার খান তাঁর মেয়েও। এরপরে দু’জনকেই ঘর থেকে বার করে দেয় ছেলে। তখনই তিনি কেরোসিন তেল সঙ্গে নিয়ে এসে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।