করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই নিজের জীবন নিয়ে তৈরি সিনেমা অর্থাৎ বায়োপিকের শুটিং শেষ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর বহুমুখী ব্যক্তিজীবনের একটি তথ্যচিত্রের কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’–এর শুটিং শুরু হয়। পরিচালনায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু মার্চ মাসে করোনার জেরে লকডাউনে তালা পড়ে শুটিং ফ্লোরে। কিন্তু ‘আনলক’ পর্বে লাইট–ক্যামেরা–অ্যাকশন চালু হতেই ফ্লোরে ফেরেন ‘ফেলুদা’। কলকাতার দুই জায়গায় তিনদিনের শুটিং বাকি ছিল। করোনাবিধি মেনে শুটিংয়ের সেই কাজ সম্পূর্ণ করেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
অভিযান— এই একই নামে ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ছবি। তাতে এক ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। এখনকার ‘অভিযান’–এর প্রোডাকশন দলের এক সদস্য বলছিলেন, ‘শুটিংয়ের সময় একেবারে মাটির মানুষের মতো মিশে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। তিনি যেভাবে কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তেন, যেভাবে ভালবেসে কাজ করতেন তা ঈর্ষণীয়।’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’–এ তাঁর কমবয়েসি চরিত্রে অভিনয় করছেন যীশু সেনগুপ্ত। তবে কিংবদন্তি অভিনেতা তাঁর জীবনের পরবর্তী পর্বে নিজের ভূমিকায় রয়েছেন নিজেই।
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারজয়ী এই অভিনেতার জীবনের নানা দিক তুলে ধরতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়েছিল এক তথ্যচিত্রের শুটিং। চলচ্চিত্রাভিনেতা, মঞ্চ অভিনেতা, কবি, লিট্ল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও চিত্রশিল্পী— তাঁর জীবনের যে এত রঙ তা একটি ক্যানভাসে আঁকতে চেয়ে তৈরি হচ্ছিল এই তথ্যচিত্র। কিন্তু অভিনেতার প্রয়াণে সেই কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।
অতনু ঘোষ বলছিলেন, তথ্যচিত্রের কাজ শুরু হওয়ার পর তিনি এবং সন্দীপ রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তাতে মূলত তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের দিনগুলির কথা রয়েছে। আর তাঁর মঞ্চে নাটকের যে অভিজ্ঞতা সে ব্যাপারে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার। কিন্তু তথ্যচিত্রের জন্য সাহিত্য সংক্রান্ত ব্যাপারে যে শুটিং করার ছিল তা থমকে যায়। কারণ, শুটিংয়ের তারিখ ছিল ৭ অক্টোবর। আর তার ঠিক আগের দিনই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্রবাবু।
সত্যজিৎ–পুত্র সন্দীপ রায় বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর, যেদিন আমরা শুটিং করছিলেন, সেদিন অনেকটা প্রাণবন্ত ছিলেন তিনি। মানসিকভাবে যথেষ্ট সজাগও ছিলেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে শুটিং চলতে থাকলেও কোনওরকম অস্বস্তি দেখাননি তিনি। কখনও ভাবিনি যে তিনি এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।’ অতনু ঘোষের কথায়, এই তথ্যচিত্রটি তৈরি হলে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে রাখার মতো হত।
করোনা অতিমারীর আগেই সৌমিত্র–অভিনীত শেষ ছবি অনীক দত্তের পরিচালনায় ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ মুক্তি পায়। এই বছরের শুরুতেই তিনি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়–নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘বেলাশুরু’র শুটিং শেষ করেছেন। সেই ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ অভিনীত এই দুটি ছবি— ‘অভিযান’ ও ‘বেলাশেষে’ কবে সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে তা অবশ্য জানা যায়নি। বলা বাহুল্য, রবিবার কিংবদন্তী অভিনেতাকে হারিয়ে তাঁকে শেষবার বড়পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন আপামর বাঙালি ও সিনেমাপ্রেমী মানুষ।