ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১ টা ছাড়িয়েছে। নিজাম প্যালেসের ১৪ তলা থেকে একে একে চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের কড়া নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর মধ্যে নামিয়ে আনেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। তারপর গাড়িতে তুলে সোজা প্রেসিডেন্সি জেলের দিকে রওনা দেন তাঁরা। মন্ত্রীদের আত্মীয়রাও যে যার গাড়িতে কনভয়ের পিছু নেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিবিআইয়ের কনভয় চারজনকে নিয়ে আলিপুরের বেলভেডিয়া রোডের প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছে যান। মুহুর্তের মধ্যে তাঁদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মূল গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। এক এক করে ভিতরে চলে যান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।
ততক্ষণে কনভয়ের পিছনে আসা আত্মীয়রাও কেউ কেউ সিবিআইয়ের দলের সঙ্গে মূল গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে আগেই ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী ও মেয়ে। এর পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় জেলের মূল ফটক। ঢুকতে গিয়ে ওখানেই আটকে পড়েন বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়। মুখের ওপর দরজা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। তখন জেলের দরজার বাইরে বৈশাখী ও শোভনের ছেলে উপস্থিত ছিলেন। জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বৈশাখী। ভিতরে ঢুকতে না পেরে, গেট ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলতে থাকেন, ‘একবার দেখতে দিন। ওষুধটুকু অন্তত দিতে দিন। অমানুষিক ব্যবহার কেন করছেন। ওনার হাই সুগার তবু কিছু খেতে দেওয়া হয়নি।’ তাঁরাও চাইছিলেন একবার জেলের মধ্যে গিয়ে শোভনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্ত বিধি বাম। কে শোনে কার কথা। পরে সাংবাদিকদের বৈশাখী বলেন, 'শোভনবাবু হাই সুগারের রোগী। নানা সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন ওষুধের প্রয়োজন হয়। সব ওষুধ আমার কাছে রয়েছে। না দিলে বিপদ। যেভাবে ওনাকে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়েছে, সেটা বলার নয়। ওনার সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। যদি ওনার কিছু হয়, তার দায় সিবিআইয়ের হবে।'
তাঁর কাতর আবেদনেও জেল কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেওয়ায়, সাংবাদিকদের সামনেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। এমনকী, হুমকিও দেন, যদি এখন তাঁকে ভিতরে না যেতে দেওয়া হয়, তাহলে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণও করতে রাজি। তার সঙ্গে ক্ষোভও গোপন রাখেননি। বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী, মেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে আটকে দেওয়া হল। মুখের ওপর এমন ভাবে দরজা বন্ধ করল যে কোনও সময়, দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারত। শেষপর্যন্ত অবশ্য তাঁকে ভিতরে যেতে দেওয়া হয়।