করোনা জয় করলে কি বিশেষ নাগরিকের তকমা মেলে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে শহর কলকাতায়। রসিকতা করে অনেকে বলছেন, এঁদের জন্য বিশেষ পাসপোর্ট চালু করা হোক। অনেকে আবার আরও এগিয়ে ব্যাট করে বলছেন, এঁরা হলেন কলকাতা শহরের ‘নব্য ব্রাহ্মণকূল’। যাঁরা করোনা সংক্রমণকে শরীরে নিয়েও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এগুলি কী বলা উচিত? সে বিতর্কে না গেলেও নিউ নর্ম্যালে এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে।
বলা হচ্ছে, এঁরা কলকাতা শহরের নতুন এক শ্রেণির নাগরিক। নির্ভীক–অকুতোভয়। কারণ, এঁদের করোনা হয়ে সেরে গিয়েছে। এখন একা থাকলে অনেকে মাস্ক পরছেন না। ভাবছেন, শহরের সর্বত্র ঘুরে বেড়ানোর বিশেষ অধিকার আছে। খোলা আকাশের তলায় বেরিয়েও পড়েছেন। আর তাই নিয়েই এই নানা আলোচনা, চর্চা শুরু হয়েছে।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। বাংলার রাজনৈতিক ভিআইপিদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথম কয়েকদিন বাড়িতে থাকলেও পরে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পুজোর সময় তিনি মাস্ক থুতনির তলায় কণ্ঠির মতো রেখে চুটিয়ে ঘুরেছেন। নবমীর সন্ধ্যায় তিনি শ্রীভূমি ক্লাবে পারিষদ পরিবৃত হয়ে বললেন, ‘আমাদের বাইরে ঘুরতে তো হবেই। আমরা ঘরে বসে থাকলে কাজটা কারা করবে! ভয় পেলে চলবে?’
একইরকম ভয় পাচ্ছেন না শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়া। আগস্ট মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসেছেন। নিয়মিত অফিস করছেন। লোকজনের সঙ্গে দেখা করছেন। শুভানুধ্যায়ীরা ফোন করলে বলছেন, ‘ইয়েস, নাউ উই ক্যান মিট, গ্রিট অ্যান্ড ইট!’ সঞ্জয় হাসতে হাসতে বলছেন, ‘এখন তো আমি করোনাজয়ী। কী করে হয়েছিল জানি না। কিন্তু এখন সেরে ওঠার পর নিয়মিত অফিস যাচ্ছি। লোকজনের সঙ্গে দেখাও করছি।’
পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘করোনা হওয়ার পর থেকে আর সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে আমার ভাল লাগে না। একা থাকলে আর মাস্ক পরি না। কিন্তু বাড়িতে বয়স্ক মা, স্ত্রী শুভশ্রী আর ছেলের কথা ভেবে পরতেই হয়। ভাবি, আমার থেকে কারও যেন ক্ষতি না হয়। অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়কে যেমন তাঁর চিকিৎসক বলেছিলেন, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার ফলে দু’মাস করোনা তাঁকে আক্রমণ না-ও করতে পারে।
দেবযানীর কথায়, ‘তখন মনে হয়েছিল, আর কিছু হবে না। কিন্তু এখন তো আবার দু’মাস পরেও সংক্রমিত হওয়ার খবর পাচ্ছি। ফলে একবার করোনা হয়ে গিয়েছে বলে আবার হবে না, এমন ধারনাটাই ভুল বলে মনে হচ্ছে।’