সোমবার বিকেলে আচমকাই আকাশ কালো হয়ে যায়। শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। কলকাতার আলিপুরে একসময়ে সেই ঝড়ের গতি পৌঁছে গিয়েছিল ৮৪ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। গাছ, বাতিস্তম্ভ উপড়ে পড়ে যায় মাটিতে। রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। তবে এই ঝড়ের উৎস কোথায়? কী কারণে আগাম পূর্বাভাস ছাড়াই এই ধরনের তাণ্ডব দেখা গেল কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চল? গতকাল আলিপুরে তিন মিনিট ধরে ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার বেগে দাপিয়েছিল কালবৈশাখী। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলিপুর হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়, সোমবার দুপুরে রাঁচির পূর্ব দিকে তৈরি হয়েছিল একটি মেঘপুঞ্জ। এরপর ধীরে ধীরে সেই মেঘপুঞ্জের কারণে মেঘ জমে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানের আকাশেও। তৈরি হয় 'স্কোয়াল লাইন'। এর জেরেই দক্ষিণবঙ্গে গতকালকে এই তাণ্ডব দেখা দিয়েছিল। (আরও পড়ুন: আজ বাংলা জুড়ে হবে ঝড়বৃষ্টি, তাপপ্রবাহেরও সতর্কতা জারি, রইল আবহাওয়ার পূর্বাভাস)
হাওয়া অফিস জানায়, গতকাল স্কোয়াল লাইন তৈরি হওয়াতেই দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। পাশাপাশি ঝড়ের তীব্রতাও ছিল এত বেশি। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল দক্ষিণবঙ্গের ওপর বিরাজমান বজ্রগর্ভ মেঘের উচ্চতা ছিল অন্তত ১৪ কিলোমিটার। এত উঁচুতে মেঘ থাকায় তাণ্ডবও ততোধিক বেশি ছিল। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সোমবার বিকাল ৫টা ৪১ মিনিটে সর্বোচ্চ ৮৪ কিমি বেগে কালবৈশাখী ঝড় বইতে শুরু করে। তা ৩ মিনিট স্থায়ী ছিল। এরপর সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমদম এলাকায় ৬২ কিমি বেগে ঝড় বইতে শুরু করে। সেই ঝড় স্থায়ী হয় ১ মিনিটের জন্য।
আরও পড়ুন: সোমের তাণ্ডবের পর মঙ্গলেও কি ঝড়বৃষ্টি হবে কলকাতায়? কী বলছে হাওয়া অফিস
কলকাতার পাশাপাশি গতকাল হাওড়া, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনাতেও প্রবল ঝড়ের তাণ্ডব চলেছিল। জেলায় জেলায় এই তাণ্ডবের বলি হয়েছেন অন্তত ৯ জন। মৃতদের মধ্যে ১২ বছরের এক নাবালিকাও রয়েছেন। তার নাম, খুশবু যাদব। হাওড়ার শিবপুরে পিকে রায় লেনে টিউশন পড়তে গিয়েছিল খুশবু। ফেরার সময় বিদ্যুতের তারে পা জড়িয়ে মৃত্যু হয় তার। এদিকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় কালবৈশাখীর জেরে ব্যাহত হয় রেল পরিষেবা। দমদম আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে উড়ান পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছিল গতকাল। উল্লেখ্য, বিহার থেকে ওড়িশা পর্যন্ত শক্তিশালী নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়। এর জেরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বঙ্গে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতদিন ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে যা ভাদা পাচ্ছিল। এর জেরে সোমবারের মতো আগামী কয়েকদিনও দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বৃষ্টি জারি থাকবে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।