খেলতে খেলতেই আস্ত একটি সুপারি গিলে ফেলেছিল দেড় বছরের ছোট্ট মেয়ে মানসী। প্রথমে পরিবারের লোকেরা জানত না। পরে ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত এসএসকেএমের চিকিৎসকদের অসাধ্যসাধনে সুস্থ জীবন ফিরে পেল অসমের এই একরত্তি মেয়ে।
মানসীর পরিবারের লোকজনদের মারফত জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল মাস দেড়েক আগে। মানসীর সবসময় কাশি হত। বাড়ির লোকেরা ভেবেছিলেন, মেয়ের বোধহয় ঠাণ্ডা লেগেছে। তাই কাশির ওষুধও তাঁকে খাওয়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কাশি কমছিল না। এতে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন মানসীর মা–বাবা। এরপর ফুসফুসে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নেয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে ওই দুধের শিশু। অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে প্রথমে পরিবারের লোকেরা যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শিশুটির প্রথম সিটি স্ক্যান হয়। সিটি স্ক্যান করার পরই ধরা পড়ে মানসীর ফুসফুসে আটকে আছে সুপারি। এটা জানার পরই পরিবারের লোকের কাছে মানসীর অসুস্থতার কারণ পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে বের করা যাবে সেই আটকে থাকা সুপারি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের কাছে সুপারির টুকরো বের করার মতো যন্ত্রাংশ নেই। সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে এসএসকেএমে রেফার করা হয়। শিশুকে বাঁচাতে সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উড়ে আসতে কুণ্ঠাবোধ করেননি মানসীর মা–বাবা।
অসুস্থ শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করেই তার ব্রঙ্কোস্কোপি করেন এসএসকেএমের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারেঙ্গোলজির চিকিৎসকরা। ইনস্টিটিউটের প্রধান চিকিৎসক অরুনাভ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে শিশুটির অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, ডাক দিকের ফুসফুসে সুপারিটি আটকে রয়েছে। চিকিৎসকরা শিশুটির শ্বাসনালিতে নল ঢুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে টেনে আনা হয় সুপারির টুকরোগুলি। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক অরুনাভ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, মাসের পর মাস অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও যদি কাশি না কমে, তাহলে ব্রঙ্কোস্কোপি করে দেখা উচিত কোনও ফরেন পার্টিকেল আটকে আছে কিনা। না হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাতযশে শিশুটিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে চিন্তামুক্ত মানসী শীলের মা–বাবা।