নিজের দশ বছরের মেয়েকে হারিয়েছেন কঠিন রোগে। তবে মানসিক এই যন্ত্রণা নিয়েও নিজের ছোট্ট মেয়ের দেহকে রেখে গেলেন এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানটমি বিভাগে। চিকিৎসাক্ষেত্রে যাতে তাঁদের মেয়ে শ্রীতমার দেহ ব্যবহার করা হয়, সেটাই চান শিক্ষক দম্পতি। স্বভাবতই তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছেন চিকিৎসকমহল থেকে শুরু করে অনেকেই।
জানা গিয়েছে, হাওড়ার বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডল ও মঞ্জুশ্রী বাজানি পেশায় শিক্ষক। তাঁদের মেয়ে শ্রীতমা মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে ব্রেন স্টেম গ্লায়োমায় আক্রান্ত হয়। মেয়েকে সুস্থ করে তোলার জন্য সারা দেশ ঘুরেছিলেন ওই শিক্ষক দম্পতি। কিন্ত কোনও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত মেয়ের দেহদানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সোমবার এসএসকেএমে দেহ নিয়ে আসার কথা ছিল। সকাল ১১টায় দেহ আসার কথা ছিল। কিন্তু দেহ আসতে আসতে কিছুটা হলেও দেরি হয়। তবে শ্রীতমাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য অনেকেই হাসপাতালের বাইরে ভিড় জমিয়েছিলেন। হাসপাতালের তরফ থেকে মেয়েটির বাবাকে তুলে দেওয়া হয় বডি ইউটালাইজেশনের শংসাপত্র। সেই শংসাপত্র পুরসভায় জমা দিলেই পাওয়া যাবে মৃত্যুর শংসাপত্র। অ্যানাটমি বিভাগে মেয়েকে রেখে এসে ধীর পায়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান নারায়ণবাবু।
এসএসকেএমের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজীব কুণ্ডু জানান, ‘মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেও যেভাবে শিক্ষক দম্পতি তাঁদের সন্তানের দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা তুলনা হয় না। দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করে দিয়েছি। চিকিৎসাশাস্ত্রে শব ব্যবচ্ছেদের কাজে ব্যবহার করা হবে।’ দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের তরফেও শিক্ষক দম্পতির সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে।