‘পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের পবিত্র থাকতে হবে।’ সুইমস্যুটে ছবি বিতর্কে এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার ফেলিক্স রাজ। কোনও অধ্যাপককে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি বলে দাবি করে তাঁর মন্তব্য, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কখনও কোনওরকম নীতি পুলিশির প্রশ্নই ওঠে না।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, 'আমরা কোনও সংস্থা নয়, যেখানে কড়া নিয়মবিধি থাকে।' সঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা জানি যে শিক্ষকদের রোল মডেল হওয়া উচিত। একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠানে আমাদের পবিত্র হতে হবে। আপনাকে প্রতিষ্ঠানের শালীন ছবি তুলে ধরতে হবে, প্রতিষ্ঠানের নীতি তুলে ধরতে হবে। আমাদের একটি নীতি আছে। তবে সেটা আমরা কারও উপর চাপিয়ে দিই না। আমরা তাঁদের পড়ুয়াদের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠতে বলি।'
ইনস্টাগ্রামে সুইমস্যুট পরা ছবি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নীতি পুলিশির অভিযোগ তুলেছিলেন ৩১ বছরের এক সহকারী অধ্যাপক। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশের রোষের মুখে পড়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর দাবি, সর্বদা উদার ভাবধারার প্রতি সমর্থন জুগিয়ে এসেছে সেন্ট জেভিয়ার্স কর্তৃপক্ষ। কোনওরকম নীতি পুলিশির প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন: St Xavier's Controversy: শুধু সাদা, কালো নাকি ভিতরে আছে বড় ছক, HT বাংলা-র অনুসন্ধান
বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষকদের সম্মান রক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে ফাদার ফেলিক্স রাজ দাবি করেন, সেন্ট জেভিয়ার্স ‘সর্বদা উদারপন্থী মনোভাব বজায় রেখে এসেছে এবং কখনও কোনও পড়ুয়া, শিক্ষক বা কর্মীদের উপর নীতি পুলিশি চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘এটা স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে যে কোনও অধ্যাপককে পদত্যাগ করতে বলেনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কোনও অধ্যাপককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার ভাবনাও (আমাদের পক্ষে) অপমানজনক।'
সম্প্রতি ওই সহকারী অধ্যাপক দাবি করেছিলেন, গত বছর অগস্টে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। অক্টোবরে উপাচার্যের দফতর থেকে তাঁর কাছে ফোন করে একটি বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। সেখানে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং ইংরেজি বিভাগের সহকর্মী ছিলেন। বাকিরা তাঁর অপরিচিত বলে দাবি করেছেন ওই সহকারী অধ্যাপক। তাঁর দাবি, ওই বৈঠকে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ২৫ অক্টোবর ইস্তফা দিয়েছিলেন।
ইস্তফার একদিন আগে পূর্ব যাদবপুর থানায় ওই সহাকারী অধ্যাপক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, বৈঠক শুরুর পর উপাচার্য জানিয়েছিলেন যে সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের এক পড়ুয়ার অভিভাবক লিখিত অভিযোগ করেছেন। পড়ুয়ার অভিভাবক দাবি করেছেন, ওই মহিলা অধ্যাপকের 'আপত্তিজনক' ছবির দিকে ছেলেকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছেন। তারপর কাগজে প্রিন্ট করা কয়েকটি ছবি তাঁকে দেখানো হয় বলে দাবি করেছেন ওই সহকারী অধ্যাপক। যিনি ইউরোপের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন।
সেই বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি দাবি করেন, বৈঠকে ওই অধ্যাপক নিজেই জানিয়েছিলেন যে কয়েকজন পড়ুয়া এবং অভিভাবক তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফলো করেন। বৈঠকের পরদিনই ওই অধ্যাপক নিজে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। অক্টোবর শেষ হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ফাদার ফেলিক্স রাজ বলেন, 'আট মাস আগেই সেই পর্ব মিটে গিয়েছিল। আচমকা এরকম বিদ্বেষপরায়ণ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যথিত।'