বঙ্গ–বিজেপিতে এখন তোলমাটি–ঘোল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ দুই শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের মধ্যেকার দ্বন্দ্বে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠন। যা মোটেই স্বস্তিদায়ক খবর নয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একে অপরের থেকে শতযোজন দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছেন। বিরোধী দলনেতা এবং রাজ্য সভাপতির মধ্যে দূরত্ব বাড়লে তা সরাসরি সংগঠনের উপর প্রভাব পড়ে। সুতরাং নেতা–কর্মীরা কোন দিকে যাবেন বুঝতে পারেন না। এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে এবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে ইমেল করলেন রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সহ–সভাপতি সামসুর রহমান। আর সেই সূত্রেই ফাটল প্রকাশ্যে এল।
২০২৫ সালেই যে পরিস্থিতি তৈরি হল তাতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। যদি না ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যায়। একে অন্যের নাম না করে যেভাবে খোঁচা দিতে শুরু করেছেন তাতে তৃণমূল কংগ্রেস ‘নারদ নারদ’ বলতে শুরু করেছে। এই বিষয়টি এখন বঙ্গ–বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের বাতলে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই নয়া রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা করতে পারে নয়াদিল্লি। তার আগে শুভেন্দু–সুকান্তর দূরত্ব বৃদ্ধি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গত সোমবার সল্টলেকের এক হোটেলে সাংগঠনিক বৈঠক করেছিল বিজেপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বিরোধী দলনেতা। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে খোঁচা দিয়েছিলেন সুকান্ত।
আরও পড়ুন: প্রথমদিনেই বড় রেকর্ড করে ফেলল দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে বেশি ভিড়
যে কথা শুনে বেজায় চটেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘কমফোর্ট ফিল’ করেন না বলে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে শুভেন্দু আসেন না। উনি তো বড় নেতা। ব্যস্ত নেতা। বৈঠকের কথা ব্রিফ করে দেওয়া হয়। আর শুভেন্দু পাল্টা বলেছিলেন, সুকান্ত কেন এমন মন্তব্য করেছেন সেটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। যদিও বৃহস্পতিবার এই আকচা–আকচির মাঝে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলে বসেন, বিজেপিতে রাজনৈতিক যোগ্যতার নিরিখে শুভেন্দুকে বেশি পয়েন্ট দেওয়া উচিত। আসলে ভাল স্কুলে পড়লে তার একটা ব্যাপার থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্কুলে ট্রেনিং নিয়েছেন। তাই বিজেপিতে ওঁর মতো নেতা নেই।
সেখানে সুকান্ত মজুমদারকে রাজনীতির ‘নবজাতক’ বলে খোঁচা দেন কুণাল। যদিও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির দায় নিতে চাননি শুভেন্দু অধিকারী। এবার গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বৈঠকে শুভেন্দুর গরহাজির নিয়ে ক্ষুব্ধ সুকান্ত। সেটা কেন্দ্রীয় নেতাদের কানে তুলে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আর তাই খুব শীঘ্রই বঙ্গ–বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা সুকান্ত এবং শুভেন্দুকে নিয়ে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বলে জানা যাচ্ছে। তবে সেটা কবে হবে তার কোনও নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট অধিবেশনের সময় নয়াদিল্লিতে থাকবেন সুকান্ত মজুমদার। তখনই হতে পারে বৈঠক বলে সূত্রের খবর।