মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট আজ পেশ হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বাজেটে নজর দেওয়া হয়েছে রাজ্যের উন্নয়নমূলক এবং জনমুখী প্রকল্পের দিকে। রাজস্ব ঘাটতি মেটানোও অন্যতম লক্ষ্য রাজ্য সরকারের। পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হল। ৪.৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাসাগর সেতুর জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যও একই বরাদ্দ হল। এমনকী ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে আগামী অর্থবর্ষে আরও ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে। এর জন্য আরও ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছে। কিন্তু ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ালেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বাজেট পেশের সময় কেন্দ্র–রাজ্য ডিএ বা মহার্ঘভাতায় তারতম্যের অভিযোগ তুলে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। আর হট্টগোল করেন। সেখানে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের জন্য বাজেটে কোনও বরাদ্দ বাড়েনি। এই বাজেটে মুখিয়ে ছিলেন মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাড়বে ভেবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। বরং যা ছিল তাই পাবেন বাংলার মহিলারা। বাংলার মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যে টাকা পেতেন সেই টাকাই পাবেন। একই থাকছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। তবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলা। ভাতার অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে না। ২৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে।
আরও পড়ুন: বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আরও ৯ হাজার ৬০০ কোটি বরাদ্দ, বিরাট ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। সেই বকেয়া টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। আবাসের টাকা বাকি। যেটাও দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাংলার বাড়ি গড়ে তুলতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আরও ৯ হাজার ৬০০ কোটি বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য সরকার। ১৪ হাজার কোটি আগেই ছিল। ফলে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়ে হল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী আর্থিক বছরে আরও ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবার সুবিধা পেয়েছে। ৮৫ লক্ষের বেশি রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি পেল চার শতাংশ। বাজেট পেশের সময়ে ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে নতুন ডিএ। এর ফলে মোট ১৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা বাজেটে আশাকর্মীদের স্মার্টফোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন চন্দ্রিমা। ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে। পথশ্রী প্রকল্পে বরাদ্দ আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। দু’বছরের মধ্যে কার্যকর হবে ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান’। কৃষিজ বিপণন বিভাগের জন্য ৮২৬ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব। কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট পেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাজেটে শুধু প্রতিশ্রুতি থাকে। আমরা নিজস্ব রাজস্ব থেকে বাজেটে বরাদ্দ করি। বাজেটে যা বলি, তাই করি। অন্য রাজ্যের থেকে আমাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আলাদা। ওঁদের অনেক শর্ত থাকে।’