সরকার আপনার ঘরে কড়া নাড়তে আসছে। শুনতে অবাক লাগলেও আজ এটাই বাস্তব। কারণ আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। চলবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। নজিরবিহীন এই উদ্যোগে দু’মাস সাধারণ মানুষের বাড়ির কাছেই শিবির গড়বে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। এক ছাতার তলায় মিলবে সেরা ১১টি প্রকল্পের পরিষেবা। জানানো যাবে যাবতীয় অভাব–অভিযোগ। রাজ্য জুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার ওয়ার্ড স্তর পর্যন্ত একাধিক শিবিরের আয়োজন করবে রাজ্য সরকার। ওই শিবির থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত মানুষের যাবতীয় অভিযোগ শুনবেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।
জানা গিয়েছে, গৃহীত হবে সরকারি পেনশন, বিধবা বা বার্ধক্যভাতার আবেদনও। সম্ভব হলে চটজলদি নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হবেন প্রশাসনের কর্তারা। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ৪ রাউন্ডে ২০ হাজার শিবির খোলা হবে রাজ্যজুড়ে। শিবির চলবে দু’মাস ধরে। নিচুতলার কর্মীরা থাকবেন সেখানে। বিডিও বা এসডিও পদমর্যাদার আধিকারিকরাও নিয়মিত যাতায়াত করবেন শিবিরগুলিতে। তৃণমূল স্তরে পরিষেবা দেওয়ার এই কাজ কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সেটা হবে ‘রিয়েল টাইম মনিটরিং’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত কাজ কতটা এগচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে তার পর্যালোচনা করা। তার দায়িত্বে থাকবেন দপ্তরের সচিবরা।
সরকারি সূত্রে খবর, শিবির পরিচালনা করবেন বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা। গত ২৬ নভেম্বর রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করে ওই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল। কর্মসূচি চলবে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই মতো মঙ্গলবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে ওই কর্মসূচি। শিবিরগুলি হবে সরকারি অফিসের এক একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। কত সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে, কত অভিযোগের নিষ্পত্তি হচ্ছে, তা দেখভালে তৈরি হয়েছে পরিকাঠামো। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম। খোলা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালও।’
এই কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী ও কৃষক বন্ধুর মতো ১০টি প্রকল্প রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সকল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পে রাজ্যের প্রতিটি পরিবার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবে। পরে মুখ্যসচিব বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা পুরো কর্মসূচিটি তদারক করবেন। গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্স। দু’মাসব্যাপী এই উদ্যোগকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’ প্রথম রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ। চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে মানুষ তাঁদের আবেদন বা অভিযোগ জানাতে পারবেন শিবিরগুলিতে। এখানেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় ফর্ম। দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু ১৫ ডিসেম্বর। চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে সাধারণ মানুষ আবেদনপত্রগুলি পূরণ করে জমা করতে পারবেন। আগামী ২ জানুয়ারি শুরু হবে তৃতীয় রাউন্ড।
নাম, ঠিকানা–সহ এই শিবিরে ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে। যাঁদের জাতি শংসাপত্রের সার্টিফিকেট নেই, তাঁদেরকেও সাহায্য করা হবে। ওই শিবির থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তফসিলি জাতি ও উপজাতি মানুষদের জন্য ‘তফসিলি বন্ধু পেনশন প্রকল্প’–এ নাম নথিভুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাতা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে। এখানে গ্রাহকের হাতে সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে দেবেন অফিসাররা। এই প্রক্রিয়া চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। সমস্যা থাকলে তার সমাধান হবে চতুর্থ রাউন্ডে। সেটি চলবে ১৮–২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই সংক্রান্ত তথ্য সরকারের ওয়েবসাইট ‘এগিয়ে বাংলা’ থেকেও পাওয়া যাবে। প্রচার করবেন লোকপ্রসার শিল্পীরাও। আগে স্বাস্থ্যসাথী, কাস্ট সার্টিফিকেট, জয় জোহার, তফসিলি বন্ধু, খাদ্যসাথী, ঐক্যশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু এবং ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মোট ১০টি প্রকল্পে পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল নবান্ন। ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাশ্রী। এছাড়া শিবিরে থাকা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসারদের কাছে পরচার রেকর্ড সংশোধন করতে পারবেন কৃষকরা। সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রকল্প ঐক্যশ্রীতে নাম নথিভুক্ত করা যাবে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে।