বাংলায় জাল পাসপোর্টের রমরমা কারবার রুখতে এবং সন্ত্রাস দমনে সর্বদা সজাগ ও তৎপর রয়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সর্বক্ষণ তাদের কাজ ঠিকমতো করছে বলেই জঙ্গিরা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জালে উঠছে। কিন্তু, বাংলার পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে নিঃশব্দে। তাই, তাদের উপর ভরসা রাখা হোক!
রবিবার কার্যত এভাবেই বাংলার মানুষের কাছে আবেদন জানালেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এদিন লালবাজারে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং এডিজি আইন শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম।
এই বৈঠকে রাজীব কুমার দৃঢ় স্বরে জানান, বাংলাদেশে যাই ঘটুক না কেন, সেই সুযোগে এপারে কোনও অপরাধ ঘটতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, কলকাতা তথা রাজ্য়ের পুলিশ সক্রিয় ও সচেতন রয়েছে বলেই ভিনরাজ্য থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক'দিন আগেই ক্যানিং থেকে এক কাশ্মীরি জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। যে তেহরিক-উল-মুজাহিদিনের সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে। এমকী, তার সঙ্গে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবারও যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এদিন রাজীব কুমার বলেন, 'কাশ্মীরের জঙ্গিকে দু'দিন ধরে ট্র্যাক করেছি আমরা। তার গতিবিধির উপর নজর রেখেছি। তারপর কাশ্মীরের পুলিশকে ডেকেছি। আমরা নিঃশব্দে আমাদের কাজ করছি। বিশেষত জঙ্গিদের বিষয়ে তদন্ত সম্পর্কে বাইরে বেশি কথা বলা যাবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি।'
এছাড়াও, রাজীব কুমার জানান, 'পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফ-এর দেওয়া তথ্যের মাধ্যমেই কাশ্মীরের বাসিন্দা ওই জঙ্গির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তাকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গিদমনে আমাদের রেকর্ড অতীতেও ভালো ছিল। এখনও ভালো আছে। আগামী দিনেও আমরা সেই রেকর্ড ধরে রাখার চেষ্টা করব।'
রাজীব কুমার ছাড়াও এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন জাভেদ শামিম। টিভি নাইন বাংলা-এ তাঁর সেই মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, 'রবিবার দুপুরে আমরা সব সিনিয়র অফিসাররা আছি মানে বুঝতেই পারছেন, আমরা কতটা সিরিয়াস। কোনও উগ্রপন্থী যাতে ভারতীয় পাসপোর্ট না পায়, তার জন্য যা যা করণীয় সব করছে রাজ্য পুলিশ।'
কিন্তু, কেন এত সহজে পাসপোর্ট জালিয়াতি করা যাচ্ছে? সেই সম্পর্কে কিছু খামতি তুলে ধরেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তাঁকে উদ্ধৃত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, 'পাসপোর্টের ঠিকানা ভেরিফাই করার ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা নেই পুলিশের। পাসপোর্ট অথরিটি সেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছে। আমরা বলেছি, এটা পরিবর্তন করতে হবে।'
রাজীবের আরও বক্তব্য, এই প্রসঙ্গ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে যে গাইড লাইন দেওয়া রয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর বলেই সমস্য়া হচ্ছে। যেমন - বর্তমানে পাসপোর্ট ভেরিফাই করার জন্য পুলিশ কারও বাড়িতে যেতে পারে না, কাউকে থানায় ডাকতেও পারে না। আর সেই ফাঁক গলেই জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। তাঁরা এই নিয়ম পরিবর্তনের করার কথা বলছেন।
অন্যদিকে জাভেদ শামিম জানান, বর্ডারের কাছে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্তই যেতে পারে পুলিশ। ফলত, তাদের পক্ষে সরাসরি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে চলার কথা বলছেন রাজ্যের এই পুলিশকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলায় পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে আরও কঠোর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য়ে দিয়ে যেতে হবে আবেদনকারীদের।