'শুধু ক্যানিং নয়, বাংলার সমস্ত অঞ্চলেই লুট ও বঞ্চনার রেওয়াজ কায়েম হয়েছে'! 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা' নিয়ে এভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করলেন বিজেপি রাজ্য সভপতি সুকান্ত মজুমদার।
কলকাতা হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্য সরকার ভর্ৎসিত হতেই আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের একবার সরব হলেন রাজ্য বিজেপির এই নেতা তথা কেন্দ্রের মোদী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ক্যানিংয়ের একটি ঘটনায় 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা'র আওতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার্যত তার 'ভুল' স্বীকার করে নিতেই আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সরকার পক্ষকে। এমনকী, সংশ্লিষ্ট বিচারপতি এই ঘটনাকে 'ইচ্ছাকৃত জালিয়াতি' বলে তীব্র তিরস্কার করেন!
এরপরই, বৃহস্পতিবার বিকেলে (৭ নভেম্বর, ২০২৪) নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন সুকান্ত মজুমদার। সেই পোস্টে একইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সেই সরকারের প্রশাসনিক প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।
সুকান্তর অভিযোগ, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার লাগাতার সমালোচিত হচ্ছে। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন আবাস যোজনা সংক্রান্ত একটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্টের ভর্ৎসনা।'
এরপরই সুকান্ত লেখেন, 'আদালত তার পর্যবেক্ষণেই জানিয়েছে, অনিয়ম করা হচ্ছে। এমনকী, যোগ্য উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নামে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে।'
সুকান্তর অভিযোগ, 'লুট এবং বঞ্চনার এই রেওয়াজ শুধুমাত্র ক্যানিংয়ে নয়, সারা বাংলায় কায়েম হয়েছে।'
বিজেপি রাজ্যসভাপতির দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই লুটের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ একজোট হচ্ছে এবং শীঘ্রই তারা 'হীরক রানি'কে ক্ষমতাচ্যুত করবে!
প্রসঙ্গত, বিজেপি নেতানেত্রীরা মাঝেমধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'হীরক রানি' বলে কটাক্ষ করেন।
'হীরক রাজার দেশে' একটি কালজয়ী বাংলা সিনেমা। যে ছবিতে এমন এক রাজার উল্লেখ রয়েছে, যিনি অত্যাচারী, অনাচারী, নির্মম ও নিষ্ঠুর। প্রজাকে শোষণ করেই তাঁর রাজকোষ ফুলে ফেঁপে ওঠে!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে সেই হীরক রাজা এবং তাঁর অনৈতিক রাজপাটের সঙ্গে তুলনা করে আসলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যকে ফের একবার কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন সুকান্ত।
প্রসঙ্গত, ক্যানিং-১ নম্বর ব্লকের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচজন বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ঘরের জন্য আবেদন করলেও তাঁরা সেই টাকা পাননি।
অভিযোগ, আবেদনকারীদের প্রথমে স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়, তাঁদের টাকা আসেনি। পরে বলা হয়, তাঁরা ওই টাকা পাওয়ার যোগ্য নন। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন ওই পাঁচজন।
সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকার তার রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, ওই পাঁচজন ন্যায্য উপভোক্তার নামে বাড়ি তৈরির টাকা এলেও তা ভুল ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে চলে গিয়েছে!
এই ভয়ঙ্কর ভুল স্বীকারের পরই রাজ্যের তুলোধনা করেন বিচারপতি রবি কিশন কাপুর। তিনি এই ঘটনাকে 'ইচ্ছাকৃত জালিয়াতি' বলে তোপ দাগেন।
এদিকে, রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। তার আগে আবাস যোজনা নিয়ে আদালতে ভর্ৎসিত হয়ে বেকায়দায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার।
এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের সরকারকে তোপ দেগে এবং আবাস যোজনায় বঞ্চিতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ভোটে বিজেপির কোনও লাভ হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।