মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মৃত্যুকুম্ভ' মন্তব্যের প্রতিবাদে এবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের হস্তক্ষেপ দাবি করে তাঁকে চিঠি পাঠালেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য সারা ভারত এবং তার বাইরেও ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ হিন্দুর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে। এবং মুখ্যমন্ত্রীর মতো প্রশাসনিক আসনে আসীন কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ একেবারেই অনভিপ্রেত।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সুকান্ত তাঁর পাঠানো চিঠিতে রাজ্যপালকে লিখেছেন, 'মহাকুম্ভ মেলা হিন্দু ঐতিহ্যের অন্যতম পবিত্র জমায়েত। যা আস্থা, উৎসর্গ এবং আধ্যাত্মিক উন্মেষের প্রতীক। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা এই আয়োজনকে মৃত্যুকুম্ভ বলার অর্থ হল, তা আসলে সেই কোটি কোটি ভক্তের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, যাঁরা মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ করেছেন।'
সুকান্তর আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ‘শুধুমাত্র ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনই নয়, সেইসঙ্গে এর ফলে সমাজে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিভাজনও সৃষ্টি হবে।’
নিজের চিঠিতে সব শেষে এই ঘটনায় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর আবেদন বিধানসভার রেকর্ড থেকে যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার এই অংশটুকু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে তাঁর এই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, রাজ্যপালকে সেই বিষয়টিও দেখার আবেদন জানিয়েছেন সুকান্ত।
কিন্তু প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি একবারও মহাকুম্ভকে 'মৃত্যুকুম্ভ' বলে অপমান করেছেন? মুখ্যমন্ত্রীর গতকালের ভাষণের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু শুনলে বা পড়লেই বোঝা যাবে, তিনি মহাকুম্ভের প্রতি কোনও অসম্মান প্রদর্শন করেননি। তিনি সমালোচনা করেছেন, মহাকুম্ভের সেই অব্যবস্থাকে, যার জেরে অন্তত ৩০ জন মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার বিধানসভায় দাাঁড়িয়ে বলেন, 'মহাকুম্ভ আমি নাই বা বললাম, ওটা মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে! মৃত্যুকূপের মতো! আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি। আমি শ্রদ্ধা জানাই। পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু, প্ল্যানিং না করে এত হাইপ তুলে, এত লোকের মৃত্যু! বললেন ৩০ জন। কথাটা কি সঠিক? কত জনকে ভাসিয়ে দিয়েছেন নদীতে? কত? হাজার হাজার!'
বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর এই সমালোচনা যে অমূলক বা অযৌক্তিক নয়, তা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদবও বলেছেন। এমনকী, উত্তরাখণ্ডের জ্য়োতিষ পীঠের বর্তমান শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী পর্যন্ত মমতার যুক্তি সঠিক বলে মেনে নিয়েছেন এবং যোগী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।