এখন সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার শুনানি হতে পারে। কিন্তু আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নির্যাতিতার বিচার মিলবে নিম্ন আদালতেই। আর এটা কোনও ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। বরং এটাই নিয়ম। সেভাবেই বিচার হয়ে আসছে। বিচার ব্যবস্থার নিয়ম অনুযায়ী, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় প্রথমে রায়দান করবে নিম্ন আদালত। আপাতত শিয়ালদা কোর্টে সেই মামলা আছে। নিম্ন আদালত রায় দেওয়ার পরে তবেই উচ্চতর আদালতে যাবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের মামলা। অর্থাৎ ধাপে-ধাপে সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা পৌঁছাবে।
চার্জশিট পেশ, চার্জ গঠন, রায়দান
আর সেটার জন্য অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে কিছুটা সময় (কতদিন লাগবে সেটা বলা যাবে না)। কারণ এখনও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় তদন্ত চলছে। শেষ হয়নি তদন্ত প্রক্রিয়া। আদালতে চার্জশিটই পেশ করেনি সিবিআই।
নিম্ন আদালতে যখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিট পেশ করবে, সেটা হবে তরুণী চিকিৎসককে বিচার দেওয়ার দ্বিতীয় ধাপ (তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রথম ধাপ ধরে)। তারপর অভিযুক্ত বা অভিযুক্তদের চার্জ গঠন করা হবে। গৃহীত হবে সাক্ষীদের বয়ান। সেভাবেই বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে চলবে। একটা সময় বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে। আর তারপর রায়দান করবে নিম্ন আদালত।
কীভাবে ধাপে-ধাপে এগিয়েছিল নির্ভয়া মামলা?
উদাহরণস্বরূপ, নির্ভয়া মামলায় ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে (ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট) চার্জশিট দাখিল করেছিল দিল্লি পুলিশ। ২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। বিচারপক্রিয়া শেষ হয়েছিল ৩ সেপ্টেম্বর। ১০ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তদের দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছিল। আর ১৩ সেপ্টেম্বর রায়দান করেছিল ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট। চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তারপর সেই মামলা গিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে।
— চার দোষীকে যে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত, সেটা বহাল রেখেছিল হাইকোর্ট। ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ সেই রায় দেওয়া হয়েছিল।
— তারপর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল নির্ভয়া মামলা। প্রায় এক বছর শুনানি চলেছিল সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ রায়দান স্থগিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত। ৫ মে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকছে।
— তারপরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনে দাখিল করা হয়েছিল। যা খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তারপর দণ্ডিতরা প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল। ধাপে-ধাপে দিল্লি সরকার, লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সেই আর্জি গিয়েছিল (তারইমধ্যে আইনি লড়াইও চলছিল)। সর্বত্র খারিজ হয়ে গিয়েছিল প্রাণভিক্ষার আর্জি।
— শেষপর্যন্ত ২০২০ সালের ২০ মার্চ ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে নির্ভয়া কাণ্ডে চার দণ্ডিতের ফাঁসি হয়েছিল। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়ার উপরে পাশবিক অত্যাচার চলেছিল। আর ফাঁসি হয়েছিল ২০২০ সালের ২০ মার্চ।
তাহলে এখন সুপ্রিম কোর্টে RG কর নিয়ে কী মামলা চলছে?
এখন সুপ্রিম কোর্টে যে মামলাটি হয়েছে, সেটা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে শুনছে শীর্ষ আদালত। মূলত সার্বিকভাবে তদন্ত প্রক্রিয়ার নজরদারি চালাচ্ছে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। সিবিআইয়ের তদন্ত কীভাবে এগোচ্ছে, রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী, রাজ্য সরকারের বক্তব্য কী, সেইসব বিষয় শুনছে শীর্ষ আদালত। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সিবিআইকে তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্টও পেশ করতে বলেছে।