পড়ুয়াদের টিউশন ফি কমানো নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল শহরের একাধিক বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বুধবার তা খারিজ করে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপাতত হাইকোর্ট যে কমিটি তৈরি করার কথা বলেছিল স্কুলের অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করার জন্য, সেটির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে
কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল বেসরকারি স্কুলগুলির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ফি কমাতে হবে এবং ২০২০–২১ অর্থবর্ষে স্কুলের ফি বাড়ানো যাবে না। এই বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল। তাদের আবেদন ছিল, এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখল। ফলে স্থগিতাদেশ মিলল না হাইকোর্টের রায়ের ওপর। সুতরাং ২০ শতাংশ ফি কমাতেই হবে বেসরকারি স্কুলগুলিকে।
এদিন মামলাকারী স্কুলদের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন যে হাইকোর্ট এই নির্দেশের মাধ্যমে সংবিধানের ২২৬ ধারার উলঙ্ঘন করেছে। হাইকোর্ট সুপার রেগুলেটরি বডি হিসেবে কাজ করতে পারেনা, বলে তিনি জানান। হাইকোর্ট যেভাবে স্কুলগুলির অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করার জন্য কমিটি তৈরি করেছেন, সেটা মানা যায় না বলে আদালতে জানান মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন যে বেসরকারি স্কুলদের কথা না শুনেই তাদের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতীতে যে সব জাজমেন্ট উচ্চ আদালতে ধোপে টেকে নি, সেগুলির সাহায্য নিয়েছে আদালত, বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিচারপতি শাহ জিজ্ঞেস করেন যে এখন যখন স্কুল বন্ধ তখন ল্যাব ফি, স্পোর্টিং চার্জ কিভাবে নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্ঘভি বলেন হাইকোর্ট যেভাবে বলেছে রাজস্ব আদায় খরচের ৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না, সেটা টিএমএ পাই বিচারের পরিপন্থী। বিচারপতি শাহ বলেন যে সেই রায়ের সময় কি কোভিড ছিল।
আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন যে বেসরকারি স্কুলের মাইনে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতীতের সমস্ত রায়ের পরিপন্থী এটি। সেই কারণেই এটির ওপর স্থগিতাদেশ ঘোষণা করা উচিত। প্রত্যেকটি স্কুলের পরিকাঠামো যেখানে ভিন্ন, সেখানে সবার জন্য প্রযোজ্য নির্দেশ কি করে দেওয়া হল এই নিয়ে সোচ্চার হন সিঙ্ঘভি।
আদালত এই সংক্রান্ত নোটিস পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার ও অন্যান্যদের কাছে। কিন্তু আপাতত হাইকোর্টের দেওয়া ২০ শতাংশ মাইনে কমানোর সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে। তবে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল কমিটি গঠনের স্কুলগুলির অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করার জন্য, তার ওপর আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করল আদালত।
গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, গত আর্থিক বছরে অর্থাৎ ২০১৯–২০২০ সালে যে টিউশন ফি ছিল, তার ২০ শতাংশ কমাতে হবে রাজ্যের সব বেসরকারি স্কুলকে। পাশাপাশি ২০ শতাংশ কম করার পরও যে সব অভিভাবক ওই ফি দিতে পারবেন না, তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রমাণ–সহ ২০ শতাংশের বেশি ফি কমানোর আবেদন করতে পারবেন। স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনাও করতে হবে।
আর বেসরকারি স্কুলগুলির বক্তব্য, করোনা মহামারির সময় অনলাইন ক্লাস চললেও শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের বেতন এবং খরচ কমেনি। সুতরাং ফি কমানো যাবে না। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্ট সবদিক খতিয়ে দেখে সংবিধান অনুযায়ী স্কুলগুলির অডিট–অ্যাকাউন্টস দপ্তরকে ২০ শতাংশ ফি মুকুবেরই নির্দেশ দিয়েছে।