চন্দননগরের তৃণমূল বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনের বিরুদ্ধে শিল্পীদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার চন্দননগরের সভা থেকে ইন্দ্রনীলের নাম না নিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘অনেকরকম কাটমানি দেখেছি। লকডাউনে চাল চুরি দেখেছি। আমফানে ত্রিপল চুরি দেখেছি। ইনি গায়ক–গায়িকাদের কাছ থেকে কাটমানি নেন। সঙ্গীতমেলা থেকে। আমি জানি। আমাকে অনেক গায়ক–গায়িকা বলেছে, সরকার থেকে উঠেছে এত টাকা আর আমি পেয়েছি অন্য।’
শুভেন্দুর এই বক্তব্যের পর রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও সরব হয়েছে বাংলার শিল্পীমহল। শুভেন্দু যদি তাঁর অভিযোগ প্রমাণ না করতে পারেন তা হলে রাস্তায় নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী গার্গী ঘোষ। তিনি ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘গানমেলায় অংশ নেওয়া সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীর অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাটমানির প্রশ্নই নেই। শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য অত্যন্ত কুরুচিকর। ইন্দ্রনীল সেন কাটমানি নেন— এই অভিযোগ যদি তিনি যদি প্রমাণ করতে না পারেন তা হলে জনসমক্ষে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। নয়তো প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন শিল্পীরা।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইন্দ্রনীল সেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন রূপঙ্কর বাগচি, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্যের মতো স্বনামধন্য গায়করাও। ফেসবুক পোস্টে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক রূপঙ্কর বাগচি লিখেছেন, ‘সঙ্গীতমেলায় আমি বহুবার পারফর্ম করেছি। কেউ কখনও কাটমানি নেয়নি। ইন্দ্রনীলদা আমার থেকে সিনিয়র। তাঁর কাছ থেকে আমি সর্বদা সুপরামর্শ পেয়েছি।’ একইসঙ্গে রূপঙ্করের বক্তব্য, ইন্দ্রনীল ও কাটমানি বিতর্কে তাঁকে যদি কেউ তৃণমূলকর্মী বলে মনে করে তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। কারণ তিনি একেবারেই অরাজনৈতিক ব্যক্তি।
ফেসবুকে গায়ক সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘সঙ্গীতমেলা ছাড়া রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোনওদিনও আমি কাটমানির আভাস পাইনি। এ নিয়ে আমার সঙ্গে সমস্ত শিল্পীরা সহমত হবেন, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত।’ একই কথা রাঘব চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি ফেসবুকে জানিয়েছেন, ‘সময় মতো আমিও আমার সাম্মানিক পেয়েছি। সঙ্গীতমেলায় কখনও কোনওভাবে কাটমানির শিকার হননি শিল্পীরা।’ মনোময় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সঙ্গীতমেলায় আমিও বরাবর আমার পারিশ্রমিক পেয়েছি। ইন্দ্রনীলের সম্পর্কে এই মন্তব্য ভুল।’
এদিকে, অনেক ছোট বয়স থেকে গানমেলায় পারফর্ম করে এসেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, বাম আমলেও তিনি কখনও কাটমানির শিকার হননি। এবং ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূলের নতুন সরকার আসার পরও উদ্যোক্তাদের ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন আসেনি। ইমনের কথায়, ‘২০১১ সালের পর থেকেও গানমেলায় যোগ্য সম্মান আর পারিশ্রমিক পেয়েছি। ইন্দ্রনীলদা শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি একজন ভাল মনের মানুষও। তার উদাহরণ আমি বহুবার পেয়েছি।’