ভারতীয় ও হিন্দু হওয়ায় বেলঘরিয়ার যুবককে বাংলাদেশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আর সেই সায়ন ঘোষের সামনে মাথানত করে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতা, কর্মী, সমর্থকরা কুর্নিশ জানিয়েছেন শুভেন্দুকে। তাঁদের বক্তব্য, এরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। বাংলাদেশের ‘ইসলামপন্থীদের’ হাতে আক্রান্ত হওয়া যুবকের ক্ষেত্রে শুভেন্দু যে কাজটা করলেন, তা অত্যন্ত বিরল। তবে কেউ-কেউ কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য, ‘আর কত নাটক করবেন?’
আর শুভেন্দুর যে কাজটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন মত পোষণ করছে, সেই দৃশ্যের সাক্ষী বৃহস্পতিবার থেকেছে কলকাতা। বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সনাতনী সংগঠনের সভায় আসেন শুভেন্দু। ছিলেন সায়নও। সেই সমাবেশের মঞ্চে সায়নকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আর তারপর সায়নের সামনে শুয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন। তাতে দৃশ্যতই ইতঃস্তত বোধ করেন যুবক। হাতজোড় করে নেন তিনি।
‘হিন্দু ও ভারতীয় হওয়ায় আমায় আক্রমণ’
তারইমধ্যে বাংলাদেশ তাঁকে কী ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছিল, সেই কাহিনী তুলে ধরেন সায়ন। তিনি বলেন, ‘বেড়াতে গত ২৩ নভেম্বর আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমার বাড়ি ফেরার কথা ছিল ২৬ তারিখ। সেই রাতে পাঁচ-ছয়জন যুবক আমায় ঘেরাও করে। তারা স্রেফ আমায় এই কারণে মারধর করে, কারণ আমি একজন হিন্দু, আমি একজন ভারতীয়। সেই কারণেই আমায় বেধড়ক মারধর করে তারা। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হয়ত।’
‘হিন্দুকে আশ্রয় দেওয়ায় বন্ধুকেও মারধর’
বেলঘরিয়ার ছেলে সায়ন জানান, তাঁকে তো রেয়াত করা হয়নি। রেহাই পাননি তাঁর বাংলাদেশি বন্ধুও। তাঁর বন্ধুকে মারধর করা হয়। বন্ধুর পরিবারকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হতে থাকে বলেও অভিযোগ করেন সায়নি। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু ছিল। সে যখন আমায় বাঁচাতে আসে, তখন তাকেও প্রচণ্ড মারধর করে। তার পরিবারের মারাত্মক হুমকি এবং শাসানি দেওয়া হতে থাকে। কারণ সে আমায় আশ্রয় দিয়েছিল। সে একজন হিন্দুকে আশ্রয় দিয়েছিল। সে একজন ভারতীয়কে আশ্রয় দিয়েছিল।’
'কোপানো হিন্দুরা ছিলেন হাসপাতালে'
তবে সেখানেই শেষ হয়নি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে গিয়ে আরও ভয়াবহতা সাক্ষী হন বলে জানিয়েছেন সায়ন। তাঁর কথায়, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যখন চিকিৎসার জন্য যাই, তখন সেখানে কয়েকজন হিন্দু ভাইকে দেখতে পাই, যাঁদের সেখানো কোপানো অবস্থায় রাখা হয়েছিল। মর্মান্তিক (দৃশ্য ছিল সেটা)। সেখানকার প্রশাসনও সংখ্যালঘু বা হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমি সেটার জলজ্যান্ত উদাহরণ। আমি ১০০ বার (বাংলাদেশ) যাব। আমার বাংলাদেশি হিন্দু ভাইদের জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ১০০ বার যাব।’