শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁর মুখে প্রায়ই শোনা যায়, আমি নন্দীগ্রাম করা লোক। রাজ্য়ের মসনদ থেকে সিপিএমকে তাড়াতে তিনি উল্লেখযোগ্য় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই শুভেন্দু অধিকারীর মুখে বৃহস্পতিবার শোনা গেল প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী প্রয়াত জ্য়োতি বসুর নামগান। খটকা লাগলেও তিনি যা বললেন তাতে অনেকেই বিষম খেয়েছেন।
শুভেন্দু বলেন, আমরা ইতিহাস বিকৃত করি না। পশ্চিমবঙ্গের ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থী নেতা জ্যোতি বসু। এটা না হলে আমরা ভারতবর্ষে থাকতে পারতাম না।
২০শে জুন দিনটাকে এর আগেও রাজ্য বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করেছে। এবারও রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়কে স্মরণ করা হয়। তাঁর মূর্তিতে মালা দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, বঙ্গের পশ্চিম দিকটা মানে পশ্চিমবঙ্গ। এর জন্য আলাদা একটা প্রদেশ তৈরি করে ভারতভুক্তি করা। এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারত কেশরী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছিল ৫৮টি। আমরা তো ইতিহাস বিকৃত করি না। এই ৫৮জনের মধ্য়ে প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী তথা বামপন্থী নেতা জ্যোতি বসুও ছিলেন। আমরা ভারতীয় জনতা পার্টি আদর্শগতভাবে কমিউনিস্টদের বিরোধী।আমরা কখনওই বলি না যে জ্যোতিবাবু আমাদের ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দেননি।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবসকে কেন্দ্র করে এর আগেও রাজ্য ও রাজ্যপাল সংঘাত মাথাচাড়া দিয়েছিল। এনিয়ে রাজ্যের তরফে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের তরফে ১লা বৈশাখকে বাংলা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এবারও রাজ্য বিজেপি ২০ জুন দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করেছে। সেই সঙ্গেই এই দিনটির পেছনে জ্যোতি বসুর কতটা অবদান ছিল সেটাও স্বীকার করে নিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিকে এর আগে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদবাবু বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষার সূত্রে কিন্তু বঙ্গ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। এটা মাথায় রাখতে হবে। সেই ভাষার সূত্রে যদি বঙ্গ হয় এবং সেখানে যদি পশ্চিমবঙ্গের ভাবনা আনতে হয়, তাহলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের স্মৃতি যেখানে আছে, আলাদা হল যেখানে, সেটা একটু মেনে চলার দরকার আছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কোনও বিখ্যাত মানুষদের (ভিত্তিতে দিনটা নির্ধারণ করা হতে পারে)। সেটা চৈতন্যদেব হতে পারেন। সবথেকে ভালো হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে অখণ্ডতা এবং জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা একেবারে অখণ্ড বাংলা পাইনি। অখণ্ড বাংলাদেশ থেকে ভাঙা পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছি। পশ্চিমে একেবারে আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গ। সেটা যেহেতু পাইনি, তাই (আমাদের এমন একটি দিন বেছে নিতে হবে), যেখানে পশ্চিমবঙ্গের স্মৃতি সামান্যতমও থাকে। সেটা কোনওভাবে ২০ জুন নয়।’ সেই পরিস্থিতিতে রাখিপূর্ণিমার দিনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি।