কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। বাম জমানায় শিল্প প্রসারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে অনেকেই বলেন সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম এই দুটি ক্ষেত্রে যদি কিছুটা নমনীয় হত সিপিএম তবে হয়তো সিপিএম আরও কিছুদিন থেকে যেত বাংলায়। আর সেই সিঙ্গুর সরণী বেয়েই রাইটার্সে ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে সেই সময় তৃণমূল ক্ষমতা দখল করে।
সিঙ্গুরে যা হয়েছে…ইনসেনটিভের কথা যেটা বলা হয়েছে তার বাইরে তো আমরা যেতে পারি না। এবিপি আনন্দের একটা পুরনো সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব একথা জানিয়েছিলেন।
এদিকে সেই সময় মমতার পাশে থেকে যারা সিপিএমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন তার মধ্য়ে অন্যতম হলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এলাকায় মাস্টারমশাই বলেই পরিচিত তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিতেন বেচারাম মান্না।
তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। পরবর্তীতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তবে একটা সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তবে সেসব আজ অতীত। সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছে টাটারা। শিল্প হয়নি। শিল্পের জন্য় বরাদ্দ জমির সবটা ফেরত পাননি কৃষকরা। পরিস্থিতির বদল হয়েছে অনেকটাই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সেই মাস্টারমশাই। রাজনৈতিক পথ আলাদা ছিল। তবুও বুদ্ধদেববাবুতে আপাদমস্তক সৎ বলতে তিনি কুণ্ঠা বোধ করেন না। ব্যক্তি বুদ্ধদেবকে শ্রদ্ধা করি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তিনি। সংবাদমাধ্য়মে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আমার এখন মনে হচ্ছে সিঙ্গুরে শিল্প হলে রাজ্য়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হত। কৃষকরা জমি ফেরত পেলেও চাষযোগ্যভাবে পায়নি। ফলে কৃষি ও শিল্প দুই ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়েছে সিঙ্গুর।
সেই সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ব্যক্তি বুদ্ধদেবের কোনও সমালোচনা আমি করিনি। তবে জমি আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাঁর দলের নীতির বিরোধিতা করি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ও তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম রায় একটা সমঝোতার পথ খুঁজে বের করেছিলেন। যে জমিটা স্বেচ্ছায় পাওয়া গিয়েছে সেখানে টাটারা কারখানা গড়ে তুলবে আর অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে। আর সেই কথা যদি সিপিএম মেনে নিত তাহলে সিঙ্গুরে শিল্প হত। তবে সেই সময় সিপিএম এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটা উজ্জ্বল চিত্র এই সিঙ্গুর থেকেই দেখতে পেতাম।
বাংলায় শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শিল্পায়ন মানেই কাজ পাবে নতুন প্রজন্ম। নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম দুটো ক্ষেত্রে হোঁচট খায় সিপিএম। তার জেরে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হয়। যার জেরে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পথ আরও সুগম হয়। পরবর্তীতে সেই সিঙ্গুর ক্ষত নিয়ে নানা ব্যাখা দিয়েছে সিপিএম। কিন্তু বাস্তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে বাংলার শিল্পায়নের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।