রিপোর্ট ভুলের জন্য ভুল চিকিৎসা, এমনকী মৃত্যুরও ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমিশনে বেশ কয়েকটি ল্যাবরেটরি বা প্যাথলিজক্যাল সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাই এই অব্যবস্থা রুখতে বেশ কয়েকটি কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এসট্যাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) বা স্বাস্থ্য কমিশন।
তাতে বলা হয়েছে, ল্যাবরেটরি বা প্যাথলিজক্যাল সেন্টারের ভুল রিপোর্টের জেরে কোনও রোগী যদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন বা কোনও শারীরিক পরীক্ষা করানোর সময় যদি রোগী আঘাত পায় তা হলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি বা প্যাথলিজক্যাল সেন্টারকেই। একইসঙ্গে সেই পরীক্ষা করানোর জন্য যে পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয়েছে তার পুরোটাই ফেরত দিতে হবে রোগীকে। প্যাথলজিস্টদের প্রতি স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশ, এবার থেকে প্রত্যেকটি রিপোর্ট যথাযথভাবে যাচাই করে তাতে সরাসরি স্বাক্ষর করতে হবে। ডিজিটাল স্বাক্ষর না করারই নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, কোনও টেস্টের রিপোর্টে সমস্যা থাকলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উচিত রোগীকে সেই টেস্টের খরচ ফিরিয়ে দেওয়া। এর পর ওই রোগীকে বিনামূল্যে সেই টেস্ট আবার করিয়ে দিতে হবে। আর যদি রোগী অন্যত্র টেস্ট করান সে ক্ষেত্রে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তব্য হওয়া উচিত রোগীর আগের ও পরের টেস্টের খরচ ফেরত দেওয়া। এতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সদিচ্ছাও প্রকাশ পাবে।’
তিনি আরও জানান, ‘কোনও রিপোর্টে দুই ধরনের ভুল থাকতে পারে। এক, টাইপোগ্রাফিক্যাল এবং দুই, পরীক্ষা সংক্রান্ত ভুল। দেখা গেছে টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুল তিন ধরনের হয়। এক, সংখ্যা সংক্রান্ত গন্ডগোল। যেথানে পরীক্ষা ঠিকঠাকভাবে হয়েছে কিন্তু ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সেই রিপোর্ট লেখার সময় কোনও সংখ্যা টাইপ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছেন।’ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘কোনও রিপোর্টে যদি রোগীর নাম বা কোনও সংখ্যা লেখায় গলদ থাকে এবং সেই ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসা হয় তবে তাতে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। এমন ধরনের ঘটনা ঘটলে ভুল রিপোর্টের জেরে রোগী যদি কোনওভাবে আঘাত পায় তবে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি বা প্যাথলিজক্যাল সেন্টারকে।’
তিনি জানান, কোনও রোগীকে সঠিক রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। রিপোর্টে স্বাক্ষর করার সময় সাবধান থাকতে হবে প্যাথলজিস্টকেও। ডিজিটালি নয়, রিপোর্ট দু’বার ভাল করে দেখে নিয়ে সরাসরি স্বাক্ষর করতে হবে তাঁকে। কোনও রিপোর্টে যদি টাইপ সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি থাকে তবে সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি বা প্যাথলিজক্যাল সেন্টারকে জরিমানা করা উচিত। ভুল রিপোর্টে জেরে কতটা ক্ষতি হতে পারে বা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে জরিমানার পরিমাণ।