বাসের রেষারেষি নতুন কিছু নয়। যাত্রী তোলার জন্য একেবারে যাত্রী আর পথচারীদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছুটতে থাকে একের পর এক বাস। চলে ওভারটেক। আর এর পেছনে আসলে লুকিয়ে থাকে কমিশন প্রথা। এই কমিশনের টানেই রেষারেষি। এই কমিশনের টানেই যাত্রী তোলার জন্য সব ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত চালক, কন্ডাক্টর। এই কমিশনের টানেই এক স্টপেজে যাত্রী নামার আগেই ছেড়ে দেয় বাস। চলন্ত বাস থেকে নামতে বাধ্য হন যাত্রী।
কী এই কমিশন?
আসলে বহু বাসেই চালক ও কন্ডাক্টরদের সেই অর্থে বেতন নেই। সবটাই কমিশন নির্ভর। যত যাত্রী তত কমিশন। বাসে রেষারেষির মূল কারণ হল এই কমিশন। ড্রাইভারের থাকে ১২ শতাংশ আর কন্ডাক্টরের তার অর্ধেক। এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
তবে অতীতে এই কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তখন বাম জমানা। কিন্তু তখনও সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এরপর তৃণমূল জমানা। ফের চেষ্টা হল কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটাও সম্ভব হল না।
এরপর সল্টলেকে দুর্ঘটনা। গত মঙ্গলবারের দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার মিটিংয়ে বসলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফের উঠল কমিশন তুলে দেওয়ার প্রস্তাব। আর সেটা শুনে বাস মালিকরা বললেন কলকাতা সহ তিন জেলায় কেবলমাত্র কমিশন প্রথা রয়েছে। তাহলে বাকি জায়গায় কেন দুর্ঘটনা হয়। সরকার আগে গাইডলাইন করুক। বিকল্প ব্যবস্থা করুক। কমিশন প্রথা তুলে দিলে বহু শ্রমিকের পেটে লাথি পড়বে। এটাই কি চায় সরকার? প্রশ্ন বাস মালিকদের।
প্রশ্ন আছে। উত্তরটা নেই।
সম্প্রতি সল্টলেকে দুর্ঘটনায় স্কুল পড়ুয়ার মৃ্ত্যু হয়েছিল। অত্যন্ত উদ্বেগের ঘটনা। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে মায়ের সঙ্গে স্কুটিতে চেপে ফিরছিল ওই চতুর্থ শ্রেণির ওই স্কুল ছাত্র। সল্ট লেকের ২ নম্বর গেটের কাছে দুটি বাসের মধ্য়ে রেষারেষি চলছিল। সেই সময়ই সল্টলেক-হাওড়া রুটের একটি বাসের ধাক্কায় মারা যায় ওই স্কুল ছাত্র। আয়ুষ পাইক নামে ওই ছাত্রের মৃত্যুকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এদিকে তখন উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী। এই দুর্ঘটনার খবর পেয়েই তিনি পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে ফোন করেন বলে খবর।স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যু নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এরপরই মিটিংয়ে বসেন পরিবহনমন্ত্রী। মিটিংয়ে বসেন পুরমন্ত্রী। ওঠে কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব। আর তাতেই রে রে করে উঠলেন বাস মালিকদের একাংশ।