শুধুমাত্র আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের জন্য মানুষ রাস্তায় নামেননি। এই আন্দোলন হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এমনই দাবি করলেন রাজ্যসভার তৃণমূল ‘সাংসদ’ জহর সরকার। যিনি তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতাকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ঘটনা এবং দুর্নীতির জেরে রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন। আর রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যেতে চলেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। আর নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মমতাকে যে চিঠি লিখেছেন জহর, সেটার ছত্রে-ছত্রে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ফুটে উঠেছে। দুর্নীতিবাজদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঠিকমতো পদক্ষেপ না করা হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আর সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।
‘… রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে নেবে সাম্প্রদায়িক শক্তিরা’
জহর বলেন, ‘আমি মনে করি, মূল যে আন্দোলন হচ্ছে, সেটা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। সেই আন্দোলনকে রাজনৈতিক অ্যাখ্যা দিয়ে সংঘাতপূর্ণ অবস্থান নেওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু যে যুব সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষরা নিয়মিত রাস্তায় প্রতিবাদে নামছেন, তাঁরা বিরোধী দলগুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
সেইসঙ্গে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও তথা অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বলেন, ‘আমাদের অকপটে এটা অনুভব করা উচিত যে এই আন্দোলনটা যতটা অভয়ার জন্য হচ্ছে, ততটা হচ্ছে রাজ্য সরকার এবং দলের (তৃণমূল) বিরুদ্ধে। আর সেজন্য অবিলম্বে ভুল সংশোধন করতে হবে। নাহলে এই রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে নেবে সাম্প্রদায়িক শক্তিরা।’
‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত ও দুর্নীতিবাজ লোকের উচ্ছৃঙ্খল মনোভাবের’
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দাবি করেন, গুটিকয়েক ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’ এবং ‘দুর্নীতিবাজ’ লোকের ‘অনিয়ন্ত্রিত উচ্ছৃঙ্খল মনোভাবের’ জন্য স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে নেমেছেন মানুষ। তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জীবনে কোনওদিনও কোনও সরকারের বিরুদ্ধে এরকম রাগ-ক্ষোভ এবং অনাস্থা দেখেননি, যা এখন দেখছেন। এমনকী তাঁর মতে, পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে সরকার যদি সত্যি কথাও বলে বা তথ্যসমৃদ্ধ কথাও বলে, তাহলে ক্ষোভের মাত্রা কমছে না।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে যেভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, তারও সমালোচনা করেছেন জহর। তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও সমালোচনা করেছেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও।
মমতার নিজের হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল, মত জহরের
তিনি বলেন, ‘আরজি কর হাসপাতালের ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে আমি কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছি। আমি আশা করছিলাম যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন পুরনো স্টাইল ছিল, সেরকমভাবেই আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। এখন রাজ্য সরকার যে সব পদক্ষেপ করছে, সেটা খুবই সামান্য। আর বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে।’
জহরের মতে, মমতা সরকার যদি আগে পদক্ষেপ করত, দুর্নীতিবাজ ডাক্তারদের চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হত, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটা ক্ষোভ তৈরি হত না। অনেক আগেই রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় রাজ্যের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও তথা অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার।