সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলার রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন ঘটেছে। তাই তো স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গেল, ‘আমি ওঁর মরদেহ দেখতে পারব না। সুব্রত দার মৃত্যুতে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমার জীবনে অনেক বিপর্যয় এসেছে। এমন দুর্যোগ আগে আসেনি।’ মুখ্যমন্ত্রী এটা বলবেন সেটা স্বাভাবিক। কারণ সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা, সমালোচকরা। তাঁরা কী বলছেন? শুনব।
অধীর চৌধুরী—শুরু থেকে কংগ্রেসী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতির দীর্ঘ অধ্যায় শেষ হল। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, সোমেন মিত্র আর সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এই তিন জুটির শেষ মানুষটিও চলে গেলেন। সুব্রত দার মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকত। হাসাতেনও। সুব্রত মুখোপাধ্যায় মানে শুধুই আনন্দ। আমি ভাবতেই পারছি না। ১ তারিখ গিয়েও হাসপাতালে দেখা করে এলাম। অনেক গল্প করলেন আমার সঙ্গে। এমনটা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। খুব খারাপ লাগছে। ওঁর যোগ্যতা, বিচক্ষণতার কোনও তুলনা হয় না।’
প্রদীপ ভট্টাচার্য—সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘শোকপ্রকাশের ভাষা নেই। কারণ সুব্রতর সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের। এমন সম্পর্ক হয়েছিল যে একে অপরের থেকে আলাদা ভাবতেই পারতাম না। পথ আলাদা হলেও অন্তরের মিল ছিল। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির নেতৃত্বে সেদিনগুলিতে লড়াই চলত। বলতেন, দেখবি এই কয়েকজন মিলেই আমরা বিধানসভায় যাব। হয়েছিলও তাই। ওঁর মৃত্যুতে আমি মর্মাহত।’
বিমান বসু—এই খবর পেয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘সুব্রত কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক। তখন থেকেই আমরা তাঁকে চিনি। ওঁর কথাবার্তা আলাদা ধাঁচের ছিল। কংগ্রেস ঘরানা এবং তারপর তৃণমূল কংগ্রেসে গেলেও সকলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। বিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারতেন।’
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য—দু’জনেই কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বর্ণময় ব্যক্তিত্বের প্রয়াণ হয়েছে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে দক্ষিণপন্থী রাজনীতি করে গিয়েছেন আজীবন। দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অটুট। মন্ত্রী হিসেবেও যোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। সোজা, সরল এবং অকপট মানুষ ছিলেন। অনেক বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন তিনি। তবে মানুষ হিসেবে সকলের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন সুব্রত। আর ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য। আমি বন্ধুবিয়োগে ভুগছি।’
অশোক ভট্টাচার্য—সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে মনোরঞ্জন রায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরাট ভূমিকা ছিল। সুব্রত মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন। রাজনৈতিকভাবে একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হল। আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি নিজেও পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তাই পরিবারের অবস্থা বুঝতে পারছি। আমার সমবেদনা রইল।’