নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই দিনটিকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় বিরোধীরা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল নিজেদের সূচি। সুতরাং কেন্দ্র–রাজ্য আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে গেল নেতাজির জন্মজয়ন্তী ইস্যুতে। কারণ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই দিনটিকে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবে পালন করবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন। তাই নেতাজি ভাবাবেগকে কে, কেমনভাবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তোলার কসুর ছাড়ছে না কোনও পক্ষ।
নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে কেন্দ্র–রাজ্য দু’পক্ষই ঠিক করেছে সারা বছর ধরে নেতাজিকে নিয়ে নানা অনুষ্ঠান করা হবে। তবে নিজেদের মতো করে। মানুষের কাছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান করা হয়েছে টিভির দিকে নজর রাখতে। সেখানে নেতাজি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন এবং অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। নেতাজির দল ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআই(এম) ঠিক করেছে, এই দিনটিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে পালন করবে। সুতরাং রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া নাম ‘পরাক্রম দিবস’ পালন করতে রাজি নন বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর এই বার্তাই পেতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যে এসে।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং বামপন্থীরা একাধিকবার দরবার করেছিল কেন্দ্রের কাছে যে, নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম সাড়ম্বরে নেতাজির জন্মজয়ন্তী এভাবে পালন করা হচ্ছে। একদিনের সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশানাল লাইব্রেরি এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এই বিষয়ে বাংলার পরিষদীয় মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে চমক দিতে এসব করা হচ্ছে। বিজেপি আসলে বিভ্রান্ত। কারণ একদিকে তারা গান্ধীর পুজো করে অন্যদিকে তারা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকেও পুজো করে। একইরকমভাবে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাঁকেও পুজো করে। বিজেপি কী জানে যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর চলার পথের বিরোধিতা করেছিলেন? এখন ভোটের জন্য রামমোহন, বিদ্যাসাগর–সহ বিশিষ্ট মনীষীদের প্রশংসা করছে।’
বিজেপির সহ–সভাপতি রীতেশ তিওয়ারি এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের খুব নীচু মানসিকতা। নরেন্দ্র মোদীর সরকারই আজাদ হিন্দ সরকারের উপযুক্ত মর্যাদা দিয়েছে। যা যুগ যুগ ধরে কেউ করেনি। ২০১৯ সালে গান্ধীজির জন্মজয়ন্তী দেশজুড়ে পালন করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে রাখা উচিত তিনি যে কংগ্রেস করতেন, সেই কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও নেতাজির ত্যাগ এবং দেশপ্রেমকে সঠিক মর্যাদা দেননি।’ সুতরাং নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীর আগে জোর তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য–রাজনীতিতে।