তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ এবং মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের মধ্যে তুমুল বাক–বিতণ্ডা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। যা আজ বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। একে অন্যের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এই আবহে আজ, বুধবার মানিকতলা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির ঘটনা বাদ দিলে মোটের উপর ভোট চলছে শান্তিপূর্ণভাবেই। তৃণমূল কংগ্রেস মানে সারাবছর যাঁরা মানুষের পাশে থাকে। সুখে বা আনন্দে না থাকলেও দুঃখে এবং বিপদে পাশে থাকবেই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। এটাই বারবার দাবি করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেটাই দেখা গেল মানিকতলা উপনির্বাচনে। বিজেপি প্রার্থীর মাকে ভোট দেওয়ায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর। কারণ তিনি সমস্যায পড়েছিলেন।
রাজনীতির ময়দানে এই দুই দল যুযুধান প্রতিপক্ষ হলেও সৌজন্য দেখাতে ভোলেননি তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর। বরং এই কাজটি করে মানুষের মন জিতে নিলেন। বুধবার দুপুরে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট দিতে আসেন কল্যাণ চৌবের মা সন্ধ্যা চৌবে। বয়স ৭০ হওয়ায় ওই বৃদ্ধা ভোটার স্লিপ আনতে ভুলে যান। তাই কোন বুথের কোন পার্টে ভোট দিতে যাবেন সেটা বুঝতে পারছিলেন না। এই আবহে এগিয়ে আসেন মানিকতলার তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট তথা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউত। তার পরে বিষয়টি শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কাউন্সিলর। আর তাতেই খুশি হন বিজেপি প্রার্থীর মা। বিবাদের মধ্যেও অন্য ছবি দেখল বাংলা।
আরও পড়ুন: কুণালের অডিয়ো ক্লিপের পাল্টা কল্যাণের হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট, তুঙ্গে মানিকতলা উপনির্বাচন
কুণাল ঘোষের দাবি কল্যাণ চৌবে তাঁকে ফোন করে নির্বাচনে অন্তর্ঘাত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাল্টা কুণাল বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেন কল্যাণ। সুতরাং যুযুধান প্রতিপক্ষের লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনিন্দ্য রাউত এসে কথা বলেন কল্যাণ চৌবের মায়ের সঙ্গে। তাঁর সমস্যার কথা শোনেন। আর বলেন, চিন্তা করবেন না। তারপর নিজেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন অনিন্দ্য। ভোটার তালিকা দেখে সন্ধ্যা চৌবের নাম খুঁজে সংশ্লিষ্ট কোন বুথের কোন পার্টে ভোট দেবেন তা বাতলে দেন। অনিন্দ্যের এই সাহায্যে পেয়ে খুশি প্রার্থীর মা। সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘ও আমার ছেলের মতো। আমি বুথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনিন্দ্য এগিয়ে এসে আমায় সাহায্য করেছে। আমি খুব খুশি।’
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মানিকতলা থেকে জেতেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধন পাণ্ডে। রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি প্রয়াত হন। তখন থেকে ওই কেন্দ্র বিধায়কহীন। আটকে ছিল মানিকতলার উপনির্বাচন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরই জট কাটে। তাই বুধবার এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করে প্রয়াত বিধায়ক সাধনের স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডেকে। বিজেপির টিকিটে লড়ছেন কল্যাণ চৌবে। একুশের নির্বাচনেও প্রার্থী হন কল্যাণ। তবে সাধন পাণ্ডের কাছে হেরে যান। আর আজকের ঘটনা নিয়ে অনিন্দ্য রাউতের কথায়, ‘ভোটাররা ভোট দিতে এলে আমাদের সাহায্য করতেই হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি এগিয়ে যাই।’