তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়, মদন মিত্র পর্ব থামলেও অভিভাবকত্ব মেনে নিতে রাজি নন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। জ্ঞান দিলেই অভিভাবক হওয়া যায় না বলে এবার তোপ দাগলেন তিনি। তাও আবার দলের প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে। কোনও সমস্যা থাকলে তাদেরকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে সমস্যার মেটাতে হয় বলেও মনে করেন কুণাল ঘোষ। মানিকতলা বিধানসভার অন্তর্গত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার একটি মন্দির উদ্বোধনের মঞ্চ থেকেই দলের বর্ষীয়ান নেতৃত্বকে তুলোধনা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র। তবে তিনি কারও নাম উচ্চারণ করেননি। তাই তির ঠিক কার বিরুদ্ধে ছুঁড়লেন? সেটা বলা মুশকিল।
এদিকে মুরারিপুকুরের অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। শশী পাঁজা, প্রদীপ মজুমদার, অতীন ঘোষ–সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কুণাল তাঁর ভাষণে কোনও নেতার নাম না করলেও তাঁর নিশানায় যে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন সেটা মনে করছেন অনেকে। এর আগে তাপস রায়, মদন মিত্রও সরাসরি সুদীপকে আক্রমণ করেছিলেন। এবার সেই তালিকায় নিজেকে যুক্ত করলেন কুণাল ঘোষ বলে অনেকে মনে করছেন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের স্থানীয় কাউন্সিলার অমল চক্রবর্তী মূল উদ্যোগ নেন। আমন্ত্রণপত্রে অতিথি হিসেবে কয়েকজনের নাম না থাকায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আরও বড় করে সকলকে নিয়ে এই অনুষ্ঠান করতে হবে। সকলকে নিয়ে মানে আমি কী বলতে চাইছে সেটা আর খুলে বলছি না।’
অন্যদিকে সুদীপের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট সবপক্ষকে ডাকা হয়নি। তাছাড়া মন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্রে মানিকতলার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মেয়ে শ্রেয়া পাণ্ডের নাম ছিল না। তবে সাধনবাবুর স্ত্রীর নাম ছিল। স্থানীয় কাউন্সিলার অমল চক্রবর্তীকে আগামী দিনে কোনও অনুষ্ঠান করলে সেখানে শ্রেয়াকে রাখার কথা বুঝিয়েছেন সুদীপ বলেই মনে করা হচ্ছে। সুদীপের পর বক্তব্য রাখতে উঠে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পরেশ পালের সঙ্গে পরের প্রজন্মের কারও ঝামেলা ছিল। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়। আমি ঘরে বসে জ্ঞান দিইনি। এটা মিটিয়ে নিতে হবে। সিনিয়র নেতাদের বলব, যদি কারও সংগঠনে কারও কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকে, তা হলে তিনিই হচ্ছেন আসল নেতা যিনি নিজের বাড়িতে বা অন্য কোথাও দু’জনকে ডেকে মান অভিমান মিটিয়ে দেবেন। সস্তার হাততালি পাওয়ার জন্য কার্ড দেখে নাম পড়ার রাজনীতি চলতে পারে না।’
আরও পড়ুন: অনুব্রতর বয়ান চার্জশিটে বাংলায় লেখা, বাকি তথ্য ইংরেজিতে হওয়ায় বাড়ল জটিলতা
সুতরাং এখান থেকে স্পষ্ট হচ্ছে সুদীপের ভূমিকা নিয়েই তোপ দেগেছেন কুণাল। নাম না করলেও সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় সবার সামনে। সুদীপ পরে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। বছর ঘুরলেই জোর টক্কর শুরু হবে। সেখানে এভাবে উত্তর কলকাতায় দাঁড়িয়ে এভাবে বর্ষীয়ান নেতার সমালোচনা অন্যরকম বার্তা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সুদীপের নাম না করে কুণাল বলেন, ‘আমি কোনও জায়গায় গিয়ে বলে এলাম, তোমরা মিলেমিশে চলো বললেই অভিভাবক হওয়া যায় না। আমি যদি অভিভাবক হই, তাহলে সেই এলাকার সমস্যার মধ্যে ঢুকে দু’পক্ষকে নিয়ে বসে তবেই জ্ঞান দেবো। তার আগে জ্ঞান দেওয়া মানায় না।’