তিনি ছিলেন ‘কাজপাগল’। তাই তো মৃত্যুর আগের দিনও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কেবিনে বসে ফাইল দেখেছেন! আর রাতে আচমকা মিলল শোকের খবর। বাংলার রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন। হ্যাঁ, তিনি বাংলার বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আজ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সহকর্মী থেকে বিরোধী রাজনীতির নেতারা মানতে পারছেন না।
সেখানে উপস্থিত এক সরকারি কর্মী বলেন, ‘এই তো কালই কার্ডিওলজির কেবিনে প্রায় ৪৫–৫০ মিনিট কথা হল। বাড়ি ফিরলে মন্দিরে যাব বলেছিলেন।’ প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী আধিকারিকদের কাছ থেকে দফতরের জরুরি ফাইল আনিয়ে নিয়ে হাসপাতালে বসেই দেখতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুকে দু’টি স্টেন্ট বসার পরও তাঁকে দমানো যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি জরুরি ফাইল স্ক্রুটিনি করে, খতিয়ে দেখে তবেই ছেড়েছেন তিনি।
ওঁর ব্যক্তিগত সচিব স্বপন মহাপাত্রকে বলেছিলেন, ‘স্বপন, আমি তো কালীপুজোয় যেতে পারব না। তুমি কিন্তু মনে করে যেও।’ সত্যিই তিনি আর যেতে পারলেন না। কারণ তিনি তো না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। মেয়র, প্রোটেম স্পিকার, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী, পঞ্চায়েতমন্ত্রী–সহ একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মন্ত্রী হিসেবে দফতর চালানোর প্রশাসনিক দক্ষতা তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন গত ১০ বছরে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার অলিখিত ‘নাম্বার টু’।
এখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে তাঁর জমানায় একের পর এক জাতীয় স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন দফতরকে। ১০০ দিনের কাজে একাধিকবার ভারত সেরা হয়েছে বাংলা। অনেকেই বলেন, ‘আড্ডার সময় সদারসিক, কৌতুকপ্রিয়, টিপ্পনি কাটা, মজার মানুষ হলে কী হবে, দফতরের কাজের সময় পাওয়া যেত অন্য সুব্রতকে। আক্ষরিক অর্থে ছিলেন ‘কাজপাগল’।’
হাসপাতালেও তার অন্যথা হয়নি। অথচ কালীপুজোর রাতে গিয়ে দেখা গেল, নিশ্চিন্ত শায়িত রয়েছেন এই পোড়খাওয়া নেতা, মন্ত্রী তথা মিশুকে মানুষটি। তখন একে একে এসএসকেএম হাসপাতালে হাজির রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা হাজির হন। রাত ১১টা নাগাদ যখন তাঁর দেহ বের করে মরদেহবাহী শকটে তোলা হচ্ছে, তখনও শহরের নানা প্রান্ত থেকে অনুগামীরা ভিড় জমাচ্ছেন প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য।